09 July 2014

আল-কুর'আনের পারাভিত্তিক বিষয়বস্তু ৭-৯

সপ্তম জুয (পারা)-এর বিষয়বস্তু — তাওহীদ

সূরা আল-ফাতিহার পর সূরা আল-আন‘আমই হলো প্রথম মাক্কি সূরাহ। যার ফলে পূর্বোক্ত সূরার বিষয়বস্তুর চেয়ে এর বিষয়বস্তু একদমই আলাদা। মাদানি সূরাতে যেখানে শারীআহ ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেখানে মাক্কি সূরাগুলোর কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আকীদাহ (বিশ্বাস)। আমাদের আকীদাহ্‌র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক তাওহীদই (আল্লাহর একত্ব) হচ্ছে এই মাক্কি সূরাটির মূল আলোচ্য বিষয়।

সূরা আল-ফাতিহার মতো সূরা আল-আন‘আমও শুরু হয়েছে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ (সব প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য) শব্দগুলো দিয়ে। আল-কুর’আনের মাত্র পাঁচটি সূরা এই শব্দ দুটি দিয়ে শুরু হয়েছে। এই পাঁচটি সূরাই মাক্কি সূরা। এবং এর সবগুলোরই মূল আলোচ্য বিষয় তাওহীদ।
আল-হামদু লিল্লাহ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি প্রশংসাসূচক এক বাক্য। তিনি যে আমাদের সৃষ্টি করেছেন, এবং অবারিত অনুগ্রহ দিয়ে আমাদের লালনপালন করে চলেছেন সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাসূচক এক বাক্য।

এই সূরার একটি অন্যন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মাক্কার অবিশ্বাসীরা যেসব যুক্তি তুলে ধরত এ সূরায় সেগুলোর যৌক্তিক প্রতিউত্তর দেওয়া হয়েছে। তাদের অপযুক্তির প্রতিউত্তর দেওয়া আয়াতগুলো শুরু হয়েছে ‘কুল’ (বলো) এই শব্দ দিয়ে। সূরাটিতে এই শব্দটা এসেছে প্রায় চল্লিশবার। এই আয়াতগুলো কেউ যদি চিন্তাভাবনার সাথে অধ্যয়ন করে তাহলে সে তাওহীদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে।

সূরাটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পুরো সূরাজুড়েই আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই যা হয়, মানুষ পড়ার সময় এই নামগুলোতে কেবল চোখ বুলিয়ে পরের আয়াতে চলে যায়। কোনো ভাবনাচিন্তা করে না। কিন্তু এভাবে পড়লে আল্লাহর নামের সাথে সুবিচার হয় না।

যখনই আপনার সামনে আল্লাহর কোনো নাম আসবে তখনই নিচের ব্যাপারগুলো ভাবুন:
১. এই নামগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
২. কীভাবে এই নামগুলো আমাদের জীবন ও ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলতে পারে?
৩. যে আয়াতে এই নামগুলো এসেছে তার সাথে এর সম্পর্ক কী?

পড়ার সময় এ ধরনের চিন্তাভাবনা করলে সেই পড়া সর্বোচ্চ কল্যাণ নিয়ে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আর-রহমান (সবচেয়ে দয়াবান) নামটি পড়ার সাথে সাথে আমাদের মনে হওয়া উচিত আমাদের চারপাশে আল্লাহ কত রহমাহ বিছিয়ে দিয়েছেন। আমরা কি আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি দয়াশীল আচরণ করি? কোনো আয়াতে যখন এই নামটি উল্লেখ করা হয়, তখন ভেবে দেখা উচিত আল্লাহর দয়ার কোন অংশের কথা এই আয়াতে বলা হয়েছে।

এই সূরাতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে নাবি ইব্রাহিমের (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) কাহিনি। তিনিও তাঁর লোকদেরকে তাওহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর সেটা করতে যেয়ে তাঁকে যেসব বিরোধিতা ও মিথ্যা তর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে নাবি মুহাম্মাদকে (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) তাঁর সময়ে অনুরূপ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তাওহীদ। কিন্তু তা সত্তেও অধিকাংশ সমাজেই একে অবহেলা করা হয়। অনেক লোকই ইতিহাস ও ফিক্‌হ নিয়ে বছরের পর বছর অধ্যয়ন করলেও আল্লাহর মাহাত্ম এবং তাঁর সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে না।

তাছাড়া তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ব শুধু মুখে স্বীকার করার বিষয় নয়। কাজেও এর প্রমাণ দেওয়া জরুরি। কারণ, অনেক লোকই আছেন যারা বলেন তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, কিন্তু তাদের কাজেকর্মে, জীবনযাপনে এর প্রমাণ পাওয়া যায় না। আমরা যেভাবে আমাদের জীবন যাপন করি তাতে যদি তাওহীদের প্রয়োগ না থাকে তাহলে কীভাবে সেটাকে প্রকৃত বিশ্বাস বলা যায়?

সূরাটির শেষ আয়াতটি যেন প্রকৃত বিশ্বাসীদেরই আদর্শবাণী, “বলো: আমার সলাত, আমার ত্যাগ, আমার জীবন ও মরণ সবকিছুই সকল মহাবিশ্বের প্রভু আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই, আমাকে এই আদেশই দেওয়া হয়েছে। এবং আমিই মুসলিমদের মধ্য প্রথম।” (৬:১৬২-১৬৩)


যিনি প্রকৃত বিশ্বাসী তিনি শুধু মুখে এটা বলেই খান্ত হন না যে, আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি।বরং প্রকৃত মুসলিম তো সে-ই যার জীবন-মরণ আবর্তিত হয় আল্লাহর প্রতি ইবাদাতকে কেন্দ্র করে; তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করেএই আয়াতটিই এই সূরার মূল থিমকে ফুটিয়ে তুলছে: স্রষ্টা একজনই। তাঁর কাছেই আমাদেরকে সমর্পণ করতে হবে। আমাদের সার জীবনকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তরে উৎসর্গ করতে হবে।

অষ্টম জুয (পারা)-এর বিষয়বস্তু — আকীদাহ

এই জুযের প্রথম অর্ধে রয়েছে সূরাহ আল-আন‘আমের বাকি অংশ। আর দ্বিতীয় অর্ধে শুরু হয়েছে সূরা আল-আ‘রাফ। দুটো সূরাই মাক্কি সূরা। আর দুটো সূরাতেই উঠে এসেছে আকীদাহ্‌র বিভিন্ন দিক। আকীদাহ্‌র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক তাওহীদ ছিল সূরা আল-আন‘আমের মূল আলোচ্য বিষয়। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পরেই রয়েছে তাঁর রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস। আর সেটাই সূরা আল-আ‘রাফের মূল আলোচ্য বিষয়।

আল্লাহ তাঁর রাসূলদের প্রতি যে বার্তা পাঠিয়েছেন, তাতে বিশ্বাস করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে এই সূরা শুরু। এরপর রয়েছে আদাম ও শাইতানের কাহিনি। এখানে থেকেই বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বের শুরু। এরপরেই রয়েছে জান্নাত ও জাহন্নামবাসীদের মধ্যকার কথোপকথন।

অবিশ্বাসীদের নেতা ও যারা তাদেরকে অন্ধঅনুসরণ করেছিল তাদের মধ্যকার এক ইন্টারেস্টিং কথোপকথনেরও উল্লেখ আছে সূরাটিতে (৭:৩৮-৩৯)। মানুষের বিপথে যাওয়ার একটা বড় কারণ হলো অন্ধঅনুসরণ। এর ফলে মানুষ যে একসময় আফসোস করবে এই কথপোকথনের মধ্যে রয়েছে তারই প্রমাণ। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা যা শিখি তা হচ্ছে, ইসলামের সাংস্কৃতিক সংস্করণের অন্ধ অনুসরণ বাদ দিয়ে, আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহকদের ঐশী দিকনির্দেশনার দিকে ফিরে আসা।

সূরাটিতে এরপর রয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের বিবরণ। এই সূরাটিতেই প্রথম এদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবারই যখন এসব কাহিনি পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে, তখনই ভিন্ন থিমের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এখানে থিমটা হচ্ছে, অতীতে বহু মানুষ এই বার্তাকে অস্বীকার করেছে, এবং তাদেরকে এর পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

এই জুযে যে-কাহিনিগুলো বর্ণনা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নাবি নূহ ও মহাপ্লাবন, নাবি হুদ ও আদবাসী, নাবি সালিহ ও সামূদবাসী এবং নাবি লুত ও সোডমের সমকামীরা। নাবি শুআইব ও মাদয়ানবাসীদের কাহিনির মধ্যভাগে যেয়ে শেষ হয়েছে এই জুযটি। (শান্তি বর্ষিত হোক সব নাবিদের উপর।)

কাহিনিগুলো থেকে কল্যাণ পাওয়ার জন্য প্রতিটা কাহিনিই গভীর অধ্যয়নের দাবি রাখে। প্রতিটা কাহিনিতেই রয়েছে সেসব জাতিদের কথা যারা অবিশ্বাস করেছিল, তাদের কাছে যেসব রাসূলদের পাঠানো হয়েছিল তাদের প্রত্যাখান করেছিল, এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও পাপকাজে লিপ্ত ছিল। বর্তমান পৃথিবীতে যেসব পাপাচার ও অন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে, তার সঙ্গে এসব কাহিনিগুলোর বেশ মিল রয়েছে।

সূরাটিতে খুব সুন্দর একটা অংশ রয়েছে। এখানে শারীআহর মূল উদ্দেশ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে:
“বলো: নিজের বান্দাদের জন্য সৃষ্ট আল্লাহর দেওয়া সাজসজ্জা ও পবিত্র জীবিকাকে কে নিষিদ্ধ করেছে? বলো: এগুলো এই পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য, আর কিয়ামাতের দিনে কেবল তাদের জন্যই। এমনিভাবে তিনি জ্ঞানীদের জন্য তাঁর বিধানসমূহ বর্ণনা করেন। বলো: বস্তুত আমার প্রভু হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল কাজকর্ম, পাপ, অসংগত বাড়াবাড়ি আল্লাহর সাথে অংশীদার শরিক করা—যে ব্যাপারে তোমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন সব কথা বলা যে ব্যাপারে তোমরা কিছুই জানো না।” (৭:৩২-৩৩)

আয়াতদুটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা রয়েছে:
১. হারাম প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এই পৃথিবীর সবকিছুই হালাল।
২. হালাল জিনিসগুলো একারণেই সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে বিশ্বাসীরা এগুলো ব্যবহার করতে পারে, উপভোগ করতে পারে।
৩. আল্লাহ শুধু সেগুলোই আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন যেগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর ও খারাপ।
৪. আল্লাহর প্রতিটা বিধানের পেছনেই রয়েছে প্রজ্ঞা।
৫. আল্লাহ ও তাঁর দীনের ব্যাপারে কিছু না জেনে কোনো কথা বলাকে শির্কের পর উল্লেখ করা হয়েছে। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে শির্কের পর এটাই সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ।

তো এই জুয থেকে আমরা যে শিক্ষা নিতে পারি তা হচ্ছে, ইবাদাত, উপাসনার একমাত্র যোগ্য হচ্ছেন আল্লাহ। সঠিক পথে আমাদের চালিত করার জন্য তিনি নাবি-রাসূলদের পাঠিয়েছেন। এই দিকনির্দেশনা আমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই। কারণ দুনিয়া ও পরকালের জীবনে যা কিছু আমাদের জন্য কল্যাণকর ও যা কিছু আমাদের জন্য ক্ষতিকর তার সবকিছুই বলে দেওয়া হয়েছে এই দিকনির্দেশনায়। এটাই প্রত্যাদেশ ও বার্তবাহক পাঠানোর উদ্দেশ্য।

নবম জুয (পারা)-এর বিষয়বস্তু — রাসূল এবং নেতৃত্বস্থানীয় লোকদের বিরোধিতা


এই জুযের প্রায় পুরোটাতেই রয়েছে সূরা আল-আ‘রাফ। শেষ চতুর্থাংশে এসে শুরু হয়েছে সূরা আল-আনফাল। জুযটির মূল বক্তব্য হচ্ছে রাসূলদের (তাঁদের সবার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) আনুগত্য করার গুরুত্ব। ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের কাহিনি উল্লেখের মাধ্যমে আমাদেরকে এই গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এসব কাহিনিতে একটা চমকপ্রদ ব্যাপার আছে। সবক্ষেত্রেই রাসূলদের বিরোধিতা করে এসেছে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরাএরাই তাঁদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের উস্কে দিয়েছে। কাহিনিগুলোতে “মালা’উ” (নেতাগণ) শব্দটি এসেছে বারবার। ৬০, ৬৬, ৭৫, ৮৮, ৯০, ১০৯ ও ১২৭ নং আয়াতে পাওয়া যাবে এই শব্দটা। মজার ব্যাপার হচ্ছে জুযটি শুরুই হয়েছে এই শব্দ দিয়ে।

আল-কুর’আনের কোনো কিছুই উদ্দেশ্যহীন নয়। কাজেই এই সূরাতে শব্দটি যে বারবার এসেছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে এই কাহিনিগুলো একসূত্রে গাঁথা। কাহিনিগুলোর থিম নাবি মুহাম্মাদের (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) সময়ের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনি আজও আমাদের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সমাজকে যখনই বদলাতে যাবেন—সেই পরিবর্তন যত ইতিবাচকভাবেই হোক না কেন—সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরা এর বিরোধিতা করবেই।

এর কারণ হচ্ছে, নেতারাই সমাজের বর্তমান অবস্থার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। কাজেই সমাজে যদি পরিবর্তন আসে, তাহলে তাদের অবস্থাই টলবে বেশি। মাক্কাতে গরিব, যুবা ও দাসেরা ইসলাম গ্রহণ করছিল, কারণ এটা তাদের মনে জাগিয়েছিল নতুন আশা, সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। কিন্তু কুরাইশার—যেকোনো উপায়ে সম্ভব—এর বিরোধিতা করছিল। কারণ তারা ভয় করছিল সমাজে পরিবর্তন ও নিজেদের ক্ষমতা হারানোর।

এখান থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে, যেকোনো ধরনের বিরোধিতা ও প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে আমাদের আগে থেকেই তৈরি থাকতে হবে। বিশেষ করে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় লোকদের কাছ থেকে। কারণ তাদের মন লেপ্টে আছে বর্তমান সামাজিক অবস্থানের সাথেকাজেই যেকেউই পরিবর্তনের পালে হাওয়া লাগাতে চেষ্টা করবে, স্বাভাবিকভাবে তারা নিষ্ঠুরভাবে তার বিরোধিতা করবে।

জুযটির অধিকাংশ অংশ জুড়ে রয়েছে ফিরাউনের প্রতি নাবি মূসার (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) দা‘ওয়াহ এবং ইসরাইলের বংশধরদের তিনি কীভাবে সামলেছিলেন সেসব বিষয়। আল-কুর’আনে বর্ণিত কাহিনিগুলোর মধ্যে নাবি মূসার কাহিনিই সবচেয়ে বড়, এবং এটাই সবচেয়ে বেশিবার এসেছে। বারবার পুনরাবৃত্তির পেছনে ইসলামিক বিদ্বানগণ বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন, যেমন:

১. তাঁকে মুখোমুখি করতে হয়েছিল এক অত্যাচারী শাসকের। এই উম্মাহকেও অধিকাংশ সময়ে তা-ই করতে হয়েছে।
২. এই উম্মাহর পর তাঁর উম্মাহই ছিল সবচেয়ে বড়।
৩. তাঁকে যেসব মুসলিমদের সামলাতে হয়েছিল তাদের অধিকাংশই শির্কে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তারা ইসলামও চর্চা করতে চাইত না। আজকের উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে যা খুবই প্রাসঙ্গিক।
৪. ইসরায়েলের বংশধরেরা যেসব ভুল করত, বর্তমান উম্মাহর মধ্যেও প্রায় একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। কাজেই বোধশক্তিসম্পন্নরা এসব কাহিনি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।

বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলোর সমাধান খোঁজা অত্যন্ত জরুরি। আর তাই প্রতিটা মুসলিমেরই উচিত নাবি মূসার (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) কাহিনিগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করা, চিন্তাভাবনা করা। এ থেকে বাস্তবিক শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করা।

জুযটি শেষ হয়েছে সূরা আল-আনফাল দিয়ে। এটি মাদানি সূরা। কাজেই এই সূরাতে এসে বিষয়বস্তুও জিহাদ ও রাজনীতির মতো মাদানি বিষয়ে ফিরে গেছে। সূরাটির প্রথম আয়াতগুলোতে অল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে সত্যিকার বিশ্বাসীদের গুণাবলি। এই মানদণ্ডের আলোকে বিচার করা উচিত আমরা এথেকে কতটা দূরে কিংবা কাছে। আয়াতটির অর্থ হচ্ছে:

“সত্যিকার বিশ্বাসী তো তারাই, যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে ভয়ে যখন স্মরণ করা হয় আল্লাহকে। তাঁর প্রত্যাদেশ শুনতে শুনতে যাদের বিশ্বাস যায় বেড়ে। তাদের প্রভুর উপরই তারা আস্থা রাখে। তারা সলাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে সাদাকার উদ্দেশ্যে ব্যয় করে। এরাই সত্যিকারের বিশ্বাসী; এদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা; তাদের পাপের জন্য ক্ষমা আরও রয়েছে সম্মানজনক জীবিকা।” (৮:২-৪)

No comments:

Post a Comment

আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।