মূল: আবু আলিয়াহ শুরখিল শারীফ
প্রশ্ন: শা‘বান মাসের ১৫ তারিখকে অতিরিক্ত নামাজ ও ‘ইবাদাতের জন্য আলাদা করা কি ইসলামে
অনুমোদিত? নাকি এটা কোনো তিরস্কারযোগ্য উদ্ভাবন
(বিদ‘আত)?
উত্তর: প্রতি বছরই এই ইস্যু নিয়ে বেশ ভালো পরিমাণ অস্থিরতা ও বিবাদ সৃষ্টি হয়। তা
সত্ত্বেও সত্য এটাই যে, বিদ্বানদের অবস্থান হচ্ছে
এই ইস্যুতে যুক্তিপূর্ণ মতপার্থক্য রয়েছে। প্রথম গ্রুপের বিবেচনামতে বছরের অন্য
কোনো রাতের চেয়ে এই রাতের আলাদা কোনো গুণাবলি নেই। তাঁদের মতে অতিরিক্ত ‘ইবাদাতের
জন্য এই রাতকে আলাদা করে বেছে নেওয়া অনুমোদিত নয়। অন্য গ্রুপের মতে শা‘বানের মধ্য
রাতের অবশ্যই কিছু বিশেষত্ব আছে। এবং এই রাতে অতিরিক্ত নামাজ ও
‘ইবাদাতের জন্য নিয়োজিত হওয়া উচিত।
নিচের আলোচনায় এটা স্পষ্ট হবে যে, কেন মতপার্থক্যের তৈরি
হলো। এবং ক্ল্যাসিকাল ইসলামিক আইনশাস্ত্রমতে উভয় পক্ষের অবস্থানের বৈধতাও পরিষ্কার
হবে। এছাড়াও “মধ্য শা‘বানের রাতের মধ্যে সালাত” ও “মধ্য শা‘বানের রাতের
সলাতের” পার্থক্য
সুস্পষ্ট হবে। প্রথমটার ব্যাপারে প্রমাণ থাকলেও দ্বিতীয়টার কোনো ভিত্তি নেই।
১
ক়ুর’আনে যদিও শা‘বানের ১৫ তারিখ রাতের
কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই, তবে হাদীসের মধ্যে এই
রাতের গুণাবলি বা ফাদা‘ইলের বর্ণনা পাওয়া যায়। এসব হাদীসের মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে
বেশি উল্লেখযোগ্য ও ব্যাপকভাবে উদ্ধৃত হয় সেগুলো হচ্ছে:
ক. মু‘আয
বিন জাবাল থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (তাঁর উপর
আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেন,
“শা‘বানের মধ্য রাতে আল্লাহ
তাঁর সৃষ্টির দিকে তাকান এবং (আল্লাহর সাথে) শরিককারী ও হিংসাকে আশ্রয়দানকারী
ব্যক্তি ব্যতীত বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দেন।” [১]
খ) ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আম্র থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (তাঁর উপর
আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেন,
“শা‘বানের মধ্য রাতে মহান
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির দিকে তাকান এবং (তাঁর সাথে) শরিককারী ও হত্যাকারী ব্যতীত তাঁর
সকল দাসকে ক্ষমা করে দেন।” [২]
গ) ‘আ’ইশাহ থেকে বর্ণিত হাদীস: “মহান আল্লাহ শা‘বানের মধ্য রাতে নিকটস্থ
মহাকাশে নেমে আসেন এবং কাল্ব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশি লোকদের ক্ষমা
করে দেন।” [৩]
২
প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে বিবাদের কারণগুলো তো মিটেই গেছে। নাবি (তাঁর উপর
আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) নিজেই যদি মধ্য-শা’বানের গুণ সম্পর্কে বলে থাকেন, তাহলে এর বিরোধিতা করার আমরা কে? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে
উপরোক্ত হাদীসগুলোর বিশুদ্ধতা বেশ বিতর্কিত। উপরোক্ত কথাগুলো আসলেই নাবির (তাঁর
উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) কি না সে ব্যাপারে হাদীস বিশেষজ্ঞগণ একমত নন।
“এই রাতের আলাদা কোনো মর্যাদা নেই”—এই মতের সমর্থনকারী মালিকি একজন আইনজ্ঞ
বলেছেন, “শা‘বানের মধ্যরাত, এর গুণাবলি ও এই রাতে
ভাগ্য নির্ধারিত হয়—এ ব্যাপারে এমন কোনো বিশুদ্ধ হাদীস নেই যার উপর নির্ভর করা
যায়।” [৪]
এই মতের সমর্থনকারীদের মধ্যে আরও আছেন ইব্ন আল-জাওযি, আত-তারতুশি ও আল-হাফিয আল-‘ইরাকি। [৫]
এই মত সমর্থনকারী প্রখ্যাত ‘আলিমগণের মতে এই রাতের গুণাবলি বর্ণনা করে যদিও
বেশকিছু সংখ্যক হাদীস পাওয় যায়, তবে এগুলোর কোনোটিরই
ধারাবাহিক বর্ণনাকারীগণ ত্রুটিমুক্ত নয়। কিছু কিছু বর্ণনাপরম্পরায় (ইসনাদ) এমন
কিছু বর্ণনাকারী আছেন যাদের স্মরণশক্তি ও নিখুঁতভাবে বর্ণনা করার ক্ষমতা
প্রশ্নবিদ্ধ। কিছু কিছু বর্ণনাপরম্পরা বিচ্ছিন্ন। অন্যান্য বর্ণনাপরম্পরাগুলোতে
এমন কিছু বর্ণনাকারী রয়েছেন যাদের সত্যবাদিতা ও সত্যনিষ্ঠতা নিয়ে মারাত্মক সন্দেহ
বিদ্যমান।
৩
এদিকে অন্য একদল বিদ্বান মধ্য-শা‘বানের রাত ঐচ্ছিক ‘ইবাদাতের রাত—এই মতের সমর্থক।
তাঁদের যুক্তি বেশ সোজাসাপ্টা। তাঁদের অবস্থান হচ্ছে, যেহেতু মধ্য-শা‘বানের হাদীসগুলো কেবল হালকা দুর্বল, কাজেই হাদীসশাস্ত্রের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম অনুযায়ী সাহীহ বা হাসান (বিশুদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য)
মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য এগুলোর একটিকে অপরটির জন্য ব্যবহার করা যায়। এর উপর
ভিত্তি করে প্রখ্যাত শাফি’ই আইনজ্ঞ ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ইব্ন আস-সালাহ এই রায়
দিয়েছেন যে, “শা‘বানের মধ্যরাতের অবশ্যই
গুণাবলি রয়েছে। এই রাত ‘ইবাদাত করে কাটানো পছন্দনীয় (মুস্তাহাব); তবে তা হতে হবে ব্যক্তিগতভাবে, দলগতভাবে নয়।” [৬]
ইব্ন তাইমিয়্যাহ লিখেছেন, “[শা’বানের] মধ্যরাতের
গুণাবলি সম্পর্কে হাদীস ও সালাফদের (পূর্বসূরিদের) বিবৃতি
রয়েছে। এটাও বর্ণিত আছে যে, সালাফদের
কেউ কেউ এই রাতে সালাত
আদায় করতেন। যেহেতু এই রাতে ব্যক্তিগতভাবে সালাত আদায়ের নজির কিছু সালাফদের মধ্যে পাওয়া
যায় কাজেই এটা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এখানে আপত্তির অবকাশ নেই।” [৭]
অন্য একটি ফাতওয়াতে তিনি বলেছেন,
“ব্যক্তিগতভাবে কিংবা
সামষ্টিকভাবে কেউ যদি শা‘বানের মধ্যরাতে সালাত আদায় করেন, তবে সেটা উত্তম (ফা হুয়া আহসান)।” [৮]
১৫ শা‘বানের ব্যাপারে ইব্ন রাজাব [আল-হানবালি] বলেছেন, “বিশ্বাসীদের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে এই রাতে আল্লাহর স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত করা; আল্লাহর কাছে চাওয়া: তিনি যেন অপরাধগুলো মাফ করে দেন, তার দোষগুলো ঢেকে রাখেন ও কাঠিন্যকে সহজ করে দেন। এগুলোর শুরু হতে হবে আন্তরিক
অনুশোচনার (তাওবা) মাধ্যমে। কারণ, মহান আল্লাহ তাদের প্রতিই
সদয় হন, যারা
অনুতপ্ত মন নিয়ে তাঁর দিকে ফেরে।” [৯]
৪
উপরোক্ত বিষয়গুলো মধ্য-শা‘বান নিয়ে মতপার্থক্যের কিছু নমুনা। যেহেতু বিষয়টা
নিয়ে যুক্তিপূর্ণ মতপার্থক্য আছে কাজেই ১৫ শা‘বান নিয়ে অযথা অস্থিরতা সৃষ্টির কোনো
প্রয়োজন নেই। এটা নিয়ে মুসলিমদের বিভক্তও হওয়া যাবে না। কারা সুন্নাহ অনুসরণ করছে
আর কারা করছে না—শা‘বানের মধ্যরাত পালনের মধ্য দিয়ে সেই বাছবিচার করার কোনো সুযোগ
নেই। বিষয়টাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে জনসাধারণের মধ্যে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি করারও কোনো
অবকাশ নেই। যেসব জায়গায় এনিয়ে বিভেদ তৈরি হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে, অনুশোচনা করতে হবে।
ফিক্হি মতপ্রদানে যাঁরা অভিজ্ঞ উভয়পক্ষের মতামত অনুসন্ধান করে তাঁদের অবস্থান
হচ্ছে: যাঁরা এই রাতের গুণাবলি আছে বলে মনে করছেন তাঁরা একে সম্মান করছেন; আর যাঁরা মনে করেন না, তাঁরা একে অন্য সব রাতের
মতোই বিবেচনা করছেন। বাকি সব মুসলিমরা মুকাল্লিদ। সহজ ভাষায়, তাঁরা যেসব ‘আলিমকে
বিশ্বাস করেন, বিষয়টা
তাঁদের হাতেই ছেড়ে দিক। ইব্ন তাইমিয়্যাহ লিখেছেন:
“কারও মুকাল্লিদ হয়ে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো একটি মত
অনুসরণ করেন, তাহলে অন্য কোনো মুকাল্লিদ অন্য কারও মত অনুসরণ
করছে বলে তিনি কোনোভাবেই তার তিরস্কার
করতে পারেন না। কিন্তু এদের কারও কাছে যদি চূড়ান্ত শার‘ঈ প্রমাণ থাকে তাহলে সেটা
জানামাত্র মেনে নেওয়াটা কর্তব্য। প্রমাণ ছাড়া কারও জন্যই এটা অনুমোদিত নয় যে, একটি মতের উপর অন্য মতকে প্রাধান্য দেওয়া, বা কোনো মতের পক্ষপাতিত্ব
করা, বা একজন ব্যক্তির উপর অন্য কাউকে অগ্রাধিকার
দেওয়া। বরং মুকাল্লিদ ব্যক্তি যোগ্য
বিদ্বান ব্যক্তিকে অনুসরণ করতে বাধ্য। কেননা তিনি (সাধারণ ব্যক্তি) মূল্যায়ন
করতে সক্ষম নন, বা কোন হাদীসটা সঠিক বা
ভুল সেটা বলতে সক্ষম নন... আর যে ব্যক্তি কেবল একজন ‘আলিমের মত ও প্রমাণ সম্পর্কে
অবহিত কিন্তু অন্যান্য ‘আলিমের মতামত বা প্রমাণাদি সম্পর্কে অবহিত নন, তিনিও সাধারণভাবে মুকাল্লিদ। তিনি কোনোক্রমেই সেইসব বিদ্বানদের অন্তর্ভুক্ত নন
যাঁরা কোনো বর্ণনার নির্ভুলতা যাচাই বা মূল্যায়ন করতে পারেন।” [১০]
৫
এখন আমরা আলোচনা করব মধ্য-শা‘বানের বিশেষ কোনো সালাত আছে কি না সেটা নিয়ে। মধ্য-শা‘বানের সালাত বা সালাত আল-আলিফিয়্যাহ—হাজারি নামাজ—বলে যেটা
কথিত, সেটার বিশুদ্ধতা নিয়ে অনেক ‘আলিম বিরোধিতা
করেছেন। উদাহরণস্বরূপ ইব্ন তাইমিয়্যাহ এই রাতে ঐচ্ছিক (নাফ্ল) সালাত পড়ার অনুমতি আছে এই মত প্রদান করার পরও
সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে, “নির্দিষ্ট কোনো নামাজ পড়ার
জন্য মাসজিদে একত্রিত হওয়া—যেমন: এক শ রাক‘আত নামাজ, প্রতি রাক‘আতে ক়ুল হুয়া আল্লাহু আহাদ [সূরাহ আল-ইখলাস] এক
হাজারবার করে পড়া—এটা একটা বিদ‘আত [তিরস্কারযোগ্য
উদ্ভাবন]। সালাফদের থেকে এ ধরনের
কোনো নামাজের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।” [১১]
হাজারি নামাজের ব্যাপারে মুল্লা ‘আলি আল-কারি বলেছেন, “বিষয়টা কি উদ্ভট; যারা সুন্নাহর জ্ঞানের
সুঘ্রাণ পেয়েছে তারা এমন এক অযৌক্তিক নামাজ দ্বারা ঘিরে আছে। হিজরি চতুর্থ শতকের
পর এই নামাজের ইসলামের ভেতর অনুপ্রবেশ করেছে আর এর উৎপত্তি হচ্ছে জেরুজালেম থেকে।” [১২]
সুন্নাহর প্রতি হামলা ও বিদ‘আত সংক্রান্ত এক গবেষণাপত্রে আস-সুয়ুতি লিখেছেন: “আর এর মধ্যে রয়েছে হাজারি
নামাজ। মধ্য-শা‘বানে এটা পড়া হয়। এটা
খুবই দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য এমন এক সালাত যেটা কোনো (নির্ভরযোগ্য) হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত নয়। এমনকি এ ব্যাপারে সালাফদের থেকে দুর্বল কোনো প্রমাণও নেই। এটা পালন
করতে যেয়ে সাধারণ মানুষকে অযথা কষ্টে ফেলা হয়।” [১৩]
তবে এখানে একটা কথা আছে। ‘আলিমগণ হাজারি নামাজকে বাতিল বলেছেন—এটা ঠিক আছে।
তবে কিছু কিছু লোক এই নিষেধাজ্ঞাকে ভুল করে এমন মনে করেছেন যে, এই রাতে কোনো নামাজই পড়া যাবে না। তারা একটি নির্দিষ্ট নামাজের বাতিলকরণের
সাথে মধ্য-শা‘বানের রাতে যেকোনো নামাজ পড়াকে গুলিয়ে ফেলেছেন। অথচ ইব্ন তাইমিয়্যার
ফাতওয়া থেকে এটা স্পষ্ট যে হাজারি নামাজ বাতিলকরণের মধ্যে যেকোনো নামাজই বাতিল
এমনটা ভাবা ঠিক নয়।
৬
আলোচনা শেষ করার আগে মধ্য-শা‘বান নিয়ে আরও দুটি বিষয় নিয়ে একটু কথা বলতে চাই।
এর একটা হচ্ছে মধ্য-শা‘বানের রোজা। এর ভিত্তি হচ্ছে এই হাদীস: “মধ্য শা‘বানের রাতে নামাজ
পড়ো আর পরের দিন রোজা রাখো।” [১৪] আল-‘ইরাকি সহ অসংখ্য হাদীস বিশেষজ্ঞ
হাদীসটিকে দুর্বল (দা‘ঈফ)
বলেছেন। [১৫] ইব্ন রাজাব [১৬] ও আল-মুযারির মতও
অনুরূপ। [১৭] মাজ্দ বিন তাইমিয়্যাহ বলেছেন, “শা‘বানের মধ্যরাতের গুণাবলি প্রসঙ্গে হাদীস ও সালাফদের বিবৃতি রয়েছে। সালাফদের
মধ্যে এমনকি এমনও ছিলেন যাঁরা সলাত আদায় করার জন্য এই রাতকে আলাদা করতেন। শা‘বান
মাসে সিয়াম পালন প্রসঙ্গেও হাদীস আছে। কিন্তু ১৫ তারিখকে রোজা
রাখার জন্য নির্দিষ্ট করা—এ ব্যাপারে কোনো [নির্ভরযোগ্য] হাদীস নেই। বরং এটা করা
অপছন্দনীয়।” [১৮]
৭
কেউ কেউ মনে করেন শা‘বানের ১৫ রাতে বার্ষিক ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। সূরা
দুখানের ৩-৪নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি একে অবতীর্ণ করেছি এক বারাকাহময় রাতে।
নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নিরূপিত হয়।” [৪৪:৩-৪]।
সালাফদের মধ্যে একজন প্রখ্যাত বিদ্বান ‘ইকরিমাহ থেকে একটি বর্ণনায় যদিও পাওয়া যায়
যে, যে-রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত
হয় সেটা শা‘বানের মধ্যরাত; তথাপি তাঁর কাছ থেকে
দ্বিতীয় আরেকটি মতও পাওয়া যায় যে, এই রাত হচ্ছে লাইলাতুল-কাদ্রের রাত। [২০] এই
পরবর্তী মতটিই বিপুল সংখ্যক ‘আলিমদের অভিমত।
ইব্ন আল-‘আরাবি তাই বলেছেন, “অধিকাংশ বিদ্বান এই মত
পোষণ করেছেন যে, এটা লাইলাতুল-কাদ্রের রাত। কেউ কেউ
বলেছেন এটা শা‘বানের মধ্যরাত; তবে এই মতটা
অন্তঃসারশূন্য।” [২২]
আল্লাহই ভালো জানেন।
পাদটীকা
১. ইব্ন মাজাহ, নং-১৩৯০; ইব্ন হিব্বান, নং-১৯৮০। আটটি ভিন্ন
বর্ণনাপরম্পরা যাচাইয়ের পর আল-আলবানি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, “নিঃসন্দেহে হাদীসটি সামগ্রিক বর্ণনাপরম্পরার ভিত্তিতে বিশুদ্ধ।” সিলসিলাত
আল-আহাদীস আল-সাহীহাহ (রিয়াদ: মাকতাবাহ
আল-মা‘আরিফ, ১৯৭৯), ৩:১৩৮।
২. মুসনাদ আহমাদ, নং-৬৬৪২। আল-আলবানি বলেছেন, “সমর্থন হিসেবে এই বর্ণনাপরম্পরা ব্যবহারে কোনো ক্ষতি নেই।” দেখুন:
সিলসিলাত আল-আহাদীস আস-সাহীহাহ, ৩:১৩৬।
৩. ইব্ন মাজাহ, নং-১৩৮৯; আত-তিরমিযি, নং-৭৩৬। আল-মুবারাকপুরি
লিখেছেন: “শা‘বানের মধ্যরাতের গুণাবলি সম্পর্কে নিশ্চিত
কোনো প্রমাণ নেই বলে যাঁরা যুক্তি দেখান, তাঁদের বিপক্ষে এই হাদীসগুলো সামষ্টিকভাবে
প্রমাণ স্থাপন করছে।” দেখুন: তুহফাত আল-আহওয়যি বি শার্হ জামি‘
আত-তিরমিযি (বৈরুত: দার আল-কুতুব আল-‘ইলমিয়্যাহ, ১৯৯০), ৩:৩৬৭।
৪. আহকাম আল-ক়ুর’আন (বৈরুত: দার ইহয়া আল-তুরাস আল-‘আরাবি) ৪:১৬৯০।
৫. দেখুন: কিতাব আল-মাওদু‘আত (রিয়াদ: আওয়া আস-সালাফ, ১৯৯৭), ২:৪৪০-৪৪৫; আল-মুগনি ‘আন হাম্ল আল-আসফার (রিয়াদ: মাকতাবাহ আত-তারবিয়্যাহ, ১৯৯৫), ১:১৫৭; আল-হাওয়াদিস ওয়াল-বিদা‘
(রিয়াদ: দার আস-সামায়’ই, ২০০০), ৩:৭৮৯।
৬. আস-সুয়ুতি, আল-আম্র বিল-ইত্তিবা‘
ওয়ান-নাহ্য়ি ‘আনিল-ইবতিদা‘ (রিয়াদ: দার ইব্ন আল-ক়ায়্যিম, ২০০১), ১৭০।
৭. মাজমু‘ ফাতাওয়া (রিয়াদ: দার ‘আলাম আল-কুতুব, ১৯৯১), ২৩:১৩২।
৮. প্রাগুক্ত, ২৩:১৩১।
৯. লাতা’ইফ আল-মা‘আরিফ (বৈরুত: দার ইব্ন হায্ম ও মু’আস্সাসাহ আর-রায়্যান, ১৯৯৬), ১৫৪।
১০. মাজমু‘ ফাতাওয়া, ৩৫:২৩৩।
১১. প্রাগুক্ত, ২৩:১৩১।
১২. আল-আসরার আল-মাফু‘আহ ফিল-আকবার আল-মাওদু‘আহ (বৈরুত: আল-মাকতাব আল-ইসলামি, ১৯৮৬), ৪৩৯-৪৪০।
১৩. আল-আম্র বিল-ইত্তিবা‘ ওয়ান-নাহ্য়ি ‘আনিল-ইবতিদা‘, ১৭৬।
১৪. ইব্ন মাজাহ, নং-১৩৮৮।
১৫. আল-মুগনি ‘আন হাম্ল আল-আসফার, ১:১৫৭; নং-৬৩৪।
১৬. লাতা’ইফ আল-মা‘আরিফ, ১৫১।
১৭. আত-তাগরিব ওয়াত-তাহরিব (রিয়াদ: মাকতাবাহ আল-মা‘আরিফ, ২০০৩), নং-১৪৯১।
১৮. আল-মুনাউই, ফাইদ আল-কাদির (বৈরুত: দার
আল-মা‘রিফাহ) ২:৩১৭।
২০. দেখুন: ইব্ন আল-জাওযি, যাদ আল-মাসির (বৈরুত:
আল-মাকতাব আল-ইসলামি, ১৯৮৪), ৭:৩৩৬-৩৩৭। এখানে ‘ইকরিমার পরস্পরবিরোধী দুটো মতের উল্লেখ আছে।
২১. দেখুন: আত-তাবারি, জামি‘ আন তা’উইল
আল-ক়ুর’আন (কায়রো: দার হিজ্র, ২০০১), ২১:৫-৬; ক়ুরতুবি, আল-জামি‘ লি আহকাম আল-ক়ুর’আন (বৈরুত: দার আল-কুতুব আল-‘ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬), ১৬:৮৪-৮৫; ইব্ন কাসীর, তাফসির কুর’আন আল-‘আযিম (বৈরুত: দার আল-মা‘আরিফাহ, ১৯৮৭), ৪:১৪৮; সাউই, হাশিয়াহ আস-সাউই ‘আলা তাফসির আল-জালালাইন (বৈরুত: দার আল-কুতুব আল-‘ইলমিয়্যাহ, ২০০০), ৫:২৬১; ইব্ন ‘আশুর, আত-তাহরির ওয়াল-তানউইর (বৈরুত: মু’আস্সাসাহ তারিখ আল-‘আরাবি, ২০০০), ২৫:৩০৮।
২২. আহকাম আল-ক়ুর’আন, ৪:১৬৯০।
লেখক পরিচিত: উস্তাদ সুরখীল শারীফ (আবু আলিয়াহ) একজন ইমাম, লেখক, অনুবাদক। তিনি 'দ্যা
জাওজিয়্যাহ ইন্সটিউট' (The Jawziyyah
Institue)-এর
পরিচালক। ১৯৮০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন দেশে ইসলামিক শিক্ষার সাথে জড়িত।
বেশ কিছু 'আলিমের অধীনে তিনি ইসলামিক
সাইন্স (ধর্মতত্ত্ব, আইন ও আধ্যাতিকতা) বিষয়ে
পড়াশোনা করেছেন। এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: "Mor
Fish Please", "The Golden Rule of Differing" and
"Evoulution, Prayer Mats and Telescopes"। এছাড়া আরবি থেকে ইংরেজিতে
কিছু বই অনুবাদ করেছেন। ইসলামিক স্টাডিজে তিনি এমএ. ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে
তিনি গুডমায়েস (Goodmayes)-এর ইমান ফাউন্ডেশনের একজন
ইমাম হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তার বিভিন্ন লেকচার ও আর্টিকেল পাওয়া যাবে নিচের
সাইটগুলোতে:
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।