প্রতিবছরই
রামাদানের শেষে ফাঁকা হতে শুরু করে মাসজিদগুলো। ঘরের ‘ইবাদাতেও আসে শিথিলতা।
রামাদানের পুরো মাসজুড়ে যারা জাম‘আতে সলাত আদায় করল, সেই তারাই চান-রাত থেকেই
বর্জন করা শুরু করেন সলাত। যেই মানুষগুলো রামাদানের দিনগুলোতে অশ্লীল বাক্যালাপ
থেকে শুরু করে অন্যান্য যেসব নিষিদ্ধ (হারাম) ও অপছন্দনীয় (মাকরূহ) কাজ থেকে বিরত
ছিল, সেই তারাই যেন পাল্টে যেতে শুরু করেন ভোজবাজির মতো।
সবাই-ই
যে এমন তা নয়। ইচ্ছে থাকা সত্তেও অনেকে ধরে রাখতে পারেন না রামাদানে করে যাওয়া
ইবাদাতগুলো। রামাদান শেষ হতে না হতেই হারিয়ে যায় স্পিরিট। আবার গা ভাসিয়ে দেন
গড্ডলিকা প্রবাহে।
রামাদানের
পরও কীভাবে ধরে রাখা যায় রামাদানের রেশ, সারাবছর অটুট রাখা যায় রামাদানের
শিক্ষা—জেনে নেব সে বিষয়ে কিছু টিপস:
১.
প্রথমেই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে আমাদের। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা যেন
তাঁর দেখানো জীবন-ব্যবস্থা অনুসরণে অটল থাকতে পারি, ধরে রাখতে পারি ইবাদাতের
স্পিরিট সেজন্য চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। "আমাদের প্রভু, একবার দিকনির্দেশনা
দেওয়ার পর সত্য থেকে আমাদের অন্তরগুলোকে আর বাঁকা করে দেবেন না। আমাদের দান করুন
আপনার অনুগ্রহ। আপনিই তো হিসেব ছাড়া অনুগ্রহ দান করেন। (৩:৮)
২.
ন্যায়নিষ্ঠ, ধার্মিক লোকদের সঙ্গে থাকতে হবে। এমন লোকদের বন্ধু বানাতে হবে। যেসব
জায়গায় আল্লাহর যিক্র (স্মরণ) করা হয়—যেমন: ইসলামিক হালাকা, লেকচার—নিয়মিত সেসব
জায়গায় যেতে হবে।
৩. অল্প
অল্প করে হলেও ইসলামিক জ্ঞান অন্বেষণ করে যেতে হবে। জ্ঞান ছাড়া আমলে কোনো
ধারাবাহিকতা থাকে না। ইসলামিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য শৈশবের
অপূর্ণ জ্ঞানকে ঝালাই করে দিতে হবে পূর্ণাঙ্গ রূপ। এজন্য অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রি
কোর্সে অংশ নেওয়া যায়। জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আজকাল ইউটিউবে বিভিন্ন
প্রথিতযশা স্কলারদের লেকচার পাওয়া যায়। এগুলোও শোনা যেতে পারে। কিংবা স্থানীয়
লেকচার ইভেন্টগুলোতে অংশ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ইংরেজি-বাংলা বিভিন্ন অথেন্টিক
ইসলামি বই সংগ্রহ করেও শামিল হওয়া যায় জ্ঞান অন্বেষণের এই অভিযাত্রায়।
৪.
অনুবাদ সহ কুর'আন পড়া চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন আপনার দিকনির্দেশনার জন্য মহান
আল্লাহ সরাসরি যে জিনিসটি পাঠিয়েছেন সেটা হচ্ছে আল-কুর'আন। কাজেই কোনো একটি জিনিসই
যদি আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, আপনার বিশ্বাসকে মজবুত রাখতে পারে, তাহলে
সেটা হচ্ছে আল-কুর'আন। যারা আরবি বোঝেন না, তারা ভালো মানের কোনো অনুবাদ ও
তাফসীরগ্রন্থ সংগ্রহ করে বসে যান আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথনে।
৫.
উপরের কাজগুলো অল্প অল্প করেই শুরু করুন। একবারেই সব করতে হবে এমন না। তবে খেয়াল
রাখবেন গ্রাফটা যেন ঊর্ধ্বমুখি হয়।
৬.
উল্লিখিত কাজগুলোর সাথে সাথে বদভ্যাস, খারাপ কাজগুলোও বর্জন করতে হবে। না-হলে এসব
ভালো কাজের সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না। বাজে সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে, টেলিভিশনের যেসব
অনুষ্ঠান আল্লাহর স্মরণ থেকে আপনার মন ভুলিয়ে দেয় সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে:
যেমন: নাটক, সিনেমা, গান শোনা ইত্যাদি।
৭. এটা
স্বাভাবিক যে, আপনি যখন কোনো বাজে কাজ ছেড়ে দেবেন তখন আপনার হাতে কিছু বাড়তি সময়
আসবে। সেসময়টা আপনি কী করবেন সেটাও একটা ব্যাপার বটে। এজন্য বাজে অভ্যাসটা ভালো
কোনো অভ্যাস বা কল্যাণকর কাজ দিয়ে বদলে ফেলুন। যেমন: সেসময়টাতে আপনি পরিবার কিংবা
বন্ধুবান্ধবদের সাথে বাইরে খেতে যেতে পারেন, ইন্টারেস্টিং কোনো বিষয়ের উপর বই পড়তে
পারেন, হালাল কোনো বিষয়ের উপর ভিডিও দেখতে পারেন কিংবা হারিয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির
সান্নিধ্যে। যারা গান ভালোবাসেন তারা প্রচলিত গানের বিকল্প হিসেবে শুনতে পারেন
ইসলামিক নাশীদ। কিছুই সম্ভব না হলে পরিবারের সাথে সময় কাটান। হাসিমুখর পরিবেশে
পরিবারের একান্ত আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর চাইতে আনন্দের আর কী হতে পারে!
৬.
সর্বোপরি দীনে অবিচল থাকার জন্য, এবং রামাদানের রেশ ধরে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে
অনুশোচনা করতে হবে। নামকাওয়াস্তে তাওবা করলাম, মাফ চাইলাম আর রামাদান শেষে আবার
অপরাধ ও অন্যায়মূলক কাজে জড়িয়ে গেলাম—এভাবে হবে না। নির্জনে বসে একান্তে মগ্ন হয়ে
সিজদায় কিংবা দু হাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিতে হবে।
খেয়াল
রাখবেন, আল্লাহর ইবাদাত কেবল একমাসের কোনো প্যাকেজ না। এটা সারা জীবনের জন্য।
কাজেই ধরে রাখুন ন্যূনতম বাধ্যতামূলক (ফার্দ) ইবাদাতগুলো। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহর কাছে সে আমলই সবচেয়ে প্রিয়
যেটা পরিমাণে কম হলেও ধারাবাহিক। (বুখারি)
একটু
ভেবে দেখুন তো, রামাদানের ত্রিশ দিন যদি আমরা মাসজিদে যেয়ে জাম‘আতে সলাত আদায় করতে
পারি, সাহরি খাওয়ার জন্য গভীর রাতে ঘুম ভেঙে উঠতে পারি, তাহলে রামাদানের পর কেন
পারব না?
রামাদান
মাসে সিগারেটের মতো বদভ্যাস থেকে যদি প্রতিদিন ১২-১৪ ঘন্টা বিরত থাকতে পারি, তাহলে
রামাদান মাসের পরে কেন সেটা হবে না?
রামাদানের
রেশ ধরে রাখা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কারণ, আপনি নিজেই এর প্রমাণ। আপনি নিজেই তো
গোটা রামাদান জুড়ে এভাবে চলে এসেছেন, তাহলে এখন আর কেন সেটা ধরে রাখতে পারবেন না?
চাইলেই পারবেন।
রামাদানে
যিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন, তাঁর কাছে আমরা চাই, রামাদানের পরেও যেন আমরা এর রেশ
ধরে রাখতে পারি সেজন্য তিনি যেন আমাদের সবধরনের সহযোগিতা করেন। মনে রাখবেন,
রামাদান মাস চলে গেছে; কিন্তু এ মাসের যিনি স্রষ্টা তিনি কক্ষনো আমাদের ছেড়ে চলে
যান না। তিনি চিরঞ্জীব। আর তাঁর পুরস্কারও থাকবে চিরদিন।
নিয়মিত নফল সিয়াম রাখতে পারি। যেমন প্রতি সপ্তাহে সোম আর বৃহ:বার।
ReplyDeleteখুব ভাল বলেছেন জনাব আয়াতুল্লাহ
Delete