সেদিন পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ পড়ছিলাম। প্রবন্ধের এক জায়গায় লেখক একটা শব্দ ব্যবহার
করেছেন: "শ্লাঘা"। আমি বাংলা সাহিত্যের ঝানু পাঠক না-হলেও এ কথা নির্দ্বিধায়
বলতে পারি যে, উপরোক্ত শব্দের অর্থ
অনেকেরই অজানা। লেখকেরা সাধারণত পাণ্ডিত্য বা শব্দ দখলের মুনশিয়ানা দেখাতে অনেক সময়
এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করতেই পারেন। তাতে আপত্তির কিছু নেই। সমস্যা হচ্ছে আমরা বাংলাদেশিরা
বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বললেও সত্যিকার অর্থে ভাষা চর্চা তেমন করি না। কাজেই
শ্লাঘা তো শ্লাঘা, এর চেয়ে ঢের সহজ শব্দের অর্থ অনেকেই জানি বলে
মনে হয় না। ইংরেজি ভোকাবুলারি বা শব্দভান্ডার বাড়ানোর জন্য আমাদের শিক্ষিত ও সচেতন
সমাজে অনেক কসরৎ লক্ষ্য করা গেলেও বাংলার ক্ষেত্রে মানুষের চেষ্টা যে অনেক কম তা সমীক্ষা
না করেও বলা যায়।
আমাদেরই বা দোষ কী। গুগলে যেকোনো ইংরেজি শব্দের পর 'meaning' লিখলে সে শব্দের মানে চলে
আসে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে কোনো ইংরেজি শব্দের উপর মাউসের ডান বোতাম চেপে সিনোনিম বা
সমার্থ শব্দ দেখার সুযোগ মেলে। সিডিতে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ,
মেরিয়াম-ওয়েবস্টার, কলিন্সের মতো নামকরা সব অভিধানের সফটওয়্যার মেলে।
অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএসও পিছিয়ে নেই। এক ক্লিকেই যেনে নেওয়া যায় যেকোনো কঠিন বা অজানা
ইংরেজি শব্দের মানে। কিন্তু বাংলায় সেই ফুরসৎ কই?
আমাদের ভাষাপণ্ডিত ও কথিত ভাষাপ্রেমীরা ভাষার প্রতি ভালোবাসায় অজস্র বাক্যব্যয়
করলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য অভিধানের ডিজিটাল সংস্করণ বের করার তাগাদা অনুভব করেন
বলে মনে হয় না। নইলে যে-জাতি ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে সে জাতির কোনো অনলাইন অভিধান নেই, ভাবা যায়! অথচ এখন চলছে ২০১৬। রূপকল্প ডিজিটাল
বাংলাদেশের জন্য বাকি মাত্র ৫ বছর।
যাই হোক অরণ্যে রোদন করে লাভ নেই। সত্যিকার অর্থেই যারা কাজের কাজ করেন, তারা হয়তো অনেকেই প্রাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেন
না, কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ
করে যান নীরবেই। এমনই কিছু মানুষের চেষ্টায় বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধানের সফটওয়্যার
পাওয়া যায়। দুঃখজনকভাবে এতে বাংলা একাডেমির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অথচ এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য
হওয়ার কথা ছিল তাদেরই।
মাত্র এ বছর (২০১৬) বই মেলাতে বাংলা একাডেমি "আধুনিক বাংলা অভিধান" শিরোনামে
বাংলা শব্দের মানে জানার অভিধান বের করেছে। কাজটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এতদিন পরে
কেন সে প্রশ্ন তোলাই যায়। আর এর কোনো সফটভার্শন বের করার ইচ্ছে
একাডেমি কর্তৃপক্ষের আছে কি না জানি না। তবে যারা বাংলাকে ভালোবাসেন, বাংলায় কাজ করতে চান, বাংলায় শব্দের মানে জানতে চান, বাড়াতে চান শব্দভান্ডার—এবং কাজগুলো করতে চান
ফিজিকাল কোনো অভিধান না ঘেঁটে তাদের জন্য এক সুখবর দেওয়ার জন্য এই পোস্ট লেখা। সময়ের
চাহিদা তো বটেই, অফলাইন অভিধান কাজের
সময় বাঁচায় অনেক। ঝক্কিও কম। শুধু প্রয়োজন একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন।
এখন আপনি চাইলেই যেকোনো অজানা বাংলা শব্দের মানে জানতে পারবেন। জানা শব্দের মানে
জেনে ঝালাই করে নিতে পারবেন। কিংবা শব্দটি আরও কী কী অর্থে ব্যবহৃত হয় সেটিও জানতে
পারবেন। আর এসবই হবে আপনার স্মার্টফোনে।
অ্যান্ড্রয়েড প্লেস্টোরে সর্বাধিক রেটিং পাওয়া ইংরেজি-বাংলা অভিধানের ডেভেলপার
বাপ্পী এবার নিয়ে এসেছেন বাংলা-বাংলা অভিধান! অভিধানটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ
আকাদেমির সংসদ বাংলা অভিধানের অনলাইন সংস্করণ থেকে নেওয়া। প্রাথমিক ধন্যবাদ তাঁদেরই
প্রাপ্য, যাঁরা অনলাইনে বাংলা শব্দের
অর্থ জানার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত ডেভেলপার বাপ্পীকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি
অভিধানের অভাব পূরণের জন্য।
এ পর্যায়ে অভিধানের দুটো বিশেষ দিক উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি।
১. সাজেস্টেড শব্দ খোঁজার সুবিধা থাকায় যেকোনো ইংরেজি অভিধানে শব্দ খোঁজার মতো
এখানেও আপনি যেকোনো অক্ষর লেখার সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি বানানের শব্দগুলো দেখানো শুরু
করবে।
২. অভিধানে অনেক শব্দ—বিশেষ করে যেগুলো উপসর্গ যোগে গঠিত সেগুলো "-" হাইফেন
দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। যেমন "অবসাদ" শব্দটি অভিধানে পাওয়া যাবে এভাবে:
"অব-সাদ"। ফলে এ ধরনের শব্দের খোঁজ করার সময় আপনাকে "অব" লিখে
হাইফেন দিয়ে বাকি শব্দ টাইপ করতে হবে।
এই অফলাইন অভিধানটির আরেকটি বড় সুবিধা যেটা আমরা কাজে লাগাতে পারি সেটা হচ্ছে কোনো
শব্দের বানান নিয়ে দ্বিধায় পড়লে এখানে খোঁজ করলেই সঠিক বানানটি দেখে নেওয়া যাবে। ফলে
আমাদের বাংলা লেখায় বানান ভুল অনেকাংশে কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
তো আর দেরি কেন। এক্ষুনি প্লেস্টোর থেকে নামিয়ে নিন অ্যাপটি, আর জেনে নিন যেকোনো বাংলা শব্দের অর্থ। এমন একটা দরকারি পোস্ট দেওয়ার
কারণে আমার “শ্লাঘা” করতে ভুলবেন না যেন!
আলহামদুলিল্লাহ, আসলেই অনেক উপকারী একটি অ্যাপ।
ReplyDelete