জর্জ
বি. জনস্টন। ওকলাহোমার এক এনজিনিয়ারিং কোম্পানির নিরাপত্তাবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর। তার
কাজের একটা দিক হচ্ছে কর্মচারীরা তাদের মাথায় শক্ত হ্যাট পরে কাজ করছে কি না সেটা
তদারকি করা। তো প্রথম দিকে তিনি কর্তৃত্ব খাটিয়ে কর্মচারীদের বলতেন যে, তারা কেন
পরছে না? এটাই নিয়ম। তাদের পরতেই হবে। ফলাফল: তাকে দেখে কর্মচারীরা মাথায় হ্যাট
পরত। তিনি চলে গেলেই আবার তারা হ্যাট খুলে ফেলত।
ব্যাপারটা
তিনি খেয়াল করলেন। ভাবলেন একটু ভিন্নভাবে চেষ্টা করে দেখি।
এবারে তিনি কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলেন হ্যাটটাতে কোনো সমস্যা আছে কি না? পরতে কোনো অস্বস্তি হয় কি না। শান্তভঙ্গিতে তাদেরকে বোঝালেন, হ্যাটটাতো তাদের নিরাপত্তার জন্যই বানানো হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে তারা যদি এটা মাথায় না দেন তাহলে ঝুঁকিটা তাদেরই। কাজেই, তিনি পরামর্শ দিলেন তারা যেন এটা পরে থাকে।
এবারে তিনি কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলেন হ্যাটটাতে কোনো সমস্যা আছে কি না? পরতে কোনো অস্বস্তি হয় কি না। শান্তভঙ্গিতে তাদেরকে বোঝালেন, হ্যাটটাতো তাদের নিরাপত্তার জন্যই বানানো হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে তারা যদি এটা মাথায় না দেন তাহলে ঝুঁকিটা তাদেরই। কাজেই, তিনি পরামর্শ দিলেন তারা যেন এটা পরে থাকে।
এবার
ফলাফল কিছুটা ভিন্ন হলো। কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছেতেই মাথায় হ্যাট পরা শুরু করল।
বিধানও মানা হলো, কারও মধ্যে মন কালাকালিও হলো না।
এ ঘটনা
থেকে আমরা একটা বাস্তবতা বুঝতে পারি। মানুষের একটা সাধারণ প্রবণতা হলো অন্যের আদেশ
সে সহজে মানতে চায় না। আমরা যখন ইসলামের বিভিন্ন বাধ্যতামূলক বিধানগুলো কাউকে জোর
করে মানাতে চাই, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফল হয় উল্টো। যতক্ষণ নজরদারি থাকে, ততক্ষণ কেউ
হয়তো বিধানটা পালন করে। চোখের আড়াল হলেই বিধানটা এড়িয়ে যেতে শুরু করে।
অধীনস্থদের
উপর অনেকেই কর্তৃত্ব খাটাতে চায়। ধর্মীয় বিধানের দোহাই পেরে স্বামী তার স্ত্রীকে
অনুগত রাখতে চায়। বাবা-মা তার সন্তানকে ধার্মিক বানাতে চায়। ধর্ম পালন এক্ষেত্রে
যতটা না মুখ্য উদ্দেশ্য, তার চেয়ে যেন নিজের কর্তৃত্ব ফলানোটাই মূল চিন্তা। এ
ধরনের কার্যকলাপে অধিকাংশক্ষেত্রেই যা হয়: স্ত্রী হয়তো স্বামীর অনুগত হয় ঠিকই,
কিন্তু সেটা সদিচ্ছায় হয় না। মনের ভেতর একটা অশান্তি, অসন্তোষ ঠিকই বয়ে চলে। একটা
নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তান তার বাবা-মা'র কথা মেনে চললেও, পরিণত বয়সে সে আর
এসবের তোয়াক্কা করে না। নামাজ তো ছুটে যায়ই, ধর্মের ভিতটাও নড়ে ওঠে একসময়।
নামাজ
পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে—এভাবে বললে তো বলাই যায়। তবে আমরা যদি কাউকে ভালো করে
বোঝাতে পারি যে, ভাই নামাজ পড়লে আপনার এই এই কল্যাণ হবে, বোন পর্দা করলে আপনি এই
এই সুবিধাগুলো পাবেন; আর সবশেষে জান্নাত তো আছেই—তাহলে হয়তো অনেক আপসেই সমস্যাগুলো
নির্মূল করা সম্ভব।
তো
পরবর্তী সময়ে আমরা যখন আমাদের অধীনস্থদের, আমাদের পরিবারের লোকজন কিংবা
বন্ধুবান্ধবদের এসব বিধানের কথা বলব, তখন আমাদের বলার ভঙ্গিতে যেন আদেশ-আদেশ ভাবটা
না থাকে। খেয়াল রাখবেন দুনিয়ার সবচেয়ে শীর্ষ-সন্ত্রাসীও তার নিজের কাজের পক্ষে
সাফাই গায়। সেখানে এরা তো আমাদের সজন। কল্যাণটা, নেপথ্যের কারণটা বুঝিয়ে বললে
মানুষ শুনবেই। এরপরও কেউ কেউ হয়তো থাকবে যারা মানবে না। এটা না-হয় আল্লাহর উপরই
ছেড়ে দিন।
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।