12 October 2018

সালাতে কুমন্ত্রণা: যেভাবে তাড়াবেন

প্রশ্ন: সালাত পড়ার সময় বা ভালো কাজ করার সময় প্রায়ই আমার মনে আজেবাজে চিন্তা আসে সালাতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য যখন শব্দের অর্থের দিকে মন দিইমনের মধ্যে খারাপ খারাপ চিন্তা আসে সবকিছু নিয়ে আজেবাজে সব কুমন্ত্রণা আসেএমনকি আল্লাহকে নিয়েও এটা নিয়ে আমি খুবই হতাশ নিজের উপর নিজেরই রাগ হয় জানিআল্লাহ ছাড়া আর কেউ অপরাধ মাফ করেন না কিন্তু আমার এসব চিন্তাভাবনার কারণে মনে হয়আল্লাহর ব্যাপারে আজেবাজে চিন্তার চেয়ে খারাপ কিছু বুঝি আর নেই সালাত শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই কিন্তু এসব চিন্তা থামাতে পারি না বলে খুব খারাপ লাগে এগুলোর কারণে আমার সালাতের আনন্দ নষ্ট হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আমি বরবাদ হয়ে যাচ্ছি আমাকে একটু পরামর্শ দিনশাইখ

উত্তর: সব তারিফ আল্লাহর।
সালাত এবং অন্যান্য সময়ে আজেবাজে চিন্তাগুলো শয়তানের কাছ থেকে আসে সে চায় মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে বঞ্চিত করতে যাবতীয় কল্যাণ থেকে তাকে দূরে রাখতে
একবার এক সাহাবি আল্লাহর রাসূলের কাছে সালাতে কুমন্ত্রণা নিয়ে অভিযোগ করে বলেছিল, “শয়তান আমার ও আমার সালাত আর তিলাওয়াতের মাঝে এসে আমাকে ধন্দে ফেলে দেয়
আল্লাহর রাসূল  বললেন«এই শয়তানটার নাম খানযাব ও ভর করলে আল্লাহর কাছে ওর থেকে আশ্রয় চাও বাম দিকে ৩ বার থুথু ফেলো»
সেই সাহাবি পরে বলেছেন, “আমি তা করার পর শয়তানটাকে আল্লাহ দূরে সরিয়ে দিয়েছেন” (মুসলিম২২০৩)
সালাতের মূল বিষয় মগ্নতা (খুশূ) মগ্নতা-বিহীন সালাত যেন প্রাণ ছাড়া দেহের মতো সালাতে নিবিড় মগ্নতায় বিভোর হতে নিচের দুটো পদ্ধতি কাজে আসতে পারে:
সালাতে যা করছেন ও পড়ছেন তা নিয়ে ভাবুন আয়াতসহ অন্য যেসব দু-যিক্র পড়ছেনতার অর্থ নিয়ে চিন্তা করুন মাথায় রাখার চেষ্টা করবেনযেন আল্লাহকে সামনে দেখে দেখে তাঁর সঙ্গে আলাপে মগ্ন আপনি
দাস যখন সালাতে দাঁড়ায় সে তখন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে ইহসান বা ‘ইবাদাতে উৎকর্ষ মানেএমনভাবে তাঁর ‘ইবাদাত করা যেন তাকে দেখছেন যদিও জানেনতাকে দেখতে পাচ্ছেন নাকিন্তু তিনি তো আপনাকে অবশ্যই দেখছেন সালাতের এই মিষ্টি স্বাদ যত পাবেনতত সালাত পড়তে আগ্রহ বাড়বে এটা অবশ্য আপনার ঈমানের পর্যায়ের উপর নির্ভর করবে তাই ঈমান বাড়ানোর চেষ্টা করুন এর জন্য অনেক উপায় আছে
আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদ  বলেছেন, “পৃথিবীর যাবতীয় জিনিসের মধ্যে স্ত্রীদেরকে আর সুগন্ধীকে আমার সবচে প্রিয় করা হয়েছে আর আমার আনন্দ সালাতে
আরেকবার বলেছেন, “(সালাতের মাধ্যমেআমাদের প্রশান্তি দাও বিলাল” তিনি বলেননিসালাত থেকে আমাদের বিরতি দাও
সালাতে যেসব বিষয় বিঘ্ন ঘটায়মন থেকে সেগুলো যতটুকু পারুনদূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন কুমন্ত্রণা বা শয়তানের কানপড়াগুলো একেক মানুষের বেলায় একেক রকম হয় প্রত্যেকের নিজ নিজ সন্দেহ আর লালসার মাত্রা-অনুযায়ী তা ভিন্ন ভিন্ন হয় আজেবাজে বিষয় নিয়ে কে কতটা জড়িতবা অন্য কোনো জিনিসকে কে কতটা ভয় করেতার উপর কুমন্ত্রণার ধরন নির্ভর করে (মাজমূ‘ ফাতাওয়াশাইখুল-ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা২২/৬০৫)
আপনি যে বললেনআপনার আজেবাজে চিন্তা মাঝে মাঝে এমন পর্যায়ে পৌঁছায়আপনি আল্লাহকে নিয়েও আজেবাজে চিন্তা করেনএটাও শয়তানের কানপড়া আল্লাহ বলেছেন,
তোমাদের কাছে শয়তানের কোনো কানপড়া এলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও তিনি অবশ্যই সব শোনেনসব জানেন﴿ [কুরআন৪১৩৬]
সাহাবিরাও এ ধরনের ওয়াসওয়াসায় চরম বিরক্ত হতেন তাদের কেউ কেউ একবার আল্লাহর রাসূলের কাছে এসে বললেন, “মাঝে মাঝে এমন কিছু আজেবাজে চিন্তা আসেমুখে উচ্চারণ করা যায় না!”
নবিজি  জিজ্ঞেস করলেন, “আসলেই এমন এমন চিন্তা আসে?”
তারা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন
নবিজি বললেন, “এটা ঈমানের স্পষ্ট নিদর্শন” (মুসলিম১৩২)
হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নাওয়াউই বলেছেন, “‘এটা ঈমানের স্পষ্ট নিদর্শন’—নবিজির একথার মানেতোমরা এসব ওয়াসওয়াসাকে জঘন্য মনে করোএটাই ঈমানের মূর্ত প্রতীক তোমরা যদি তা মুখে না বলোবরং ওগুলো বলতে মুখে বাধেবিশ্বাস করা তো পরের কথাএতেই প্রমাণিত হয় তোমরা পরিপূর্ণ ঈমান অর্জন করেছ কোনো ধরনের সন্দেহ ছাড়াই
বলা হয়শয়তানের যাদেরকে প্ররোচিত করার আশা ছেড়ে দিয়েছেকেবল তাদেরকেই কানপড়া দেয় কাফিরদের সে যেভাবে খুশি প্ররোচিত করতে পারে তাদেরকে ওয়াসওয়াসা দেওয়া লাগে না তার সুতরাংএ হাদীসের মানেকুমন্ত্রণার কারণ নিখাদ ঈমান বা নিখাদ ঈমানের একটি নিদর্শন ওয়াসওয়াসা (এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন [মূল ওয়েবসাইটের]: ১২৩১৫ সংখ্যক প্রশ্নে)
আপনি যে এসব চিন্তাকে ঘৃণা করেনফিরে আসতে চানএটা ঈমানের চিহ্ন আল্লাহর ‘ইবাদাত করতে গেলে সবার মনেই কুমন্ত্রণা মাথাচাড়া দিতে পারে এটা অনিবার্য কিন্তু আপনাকে অবিচল থাকতে হবে সবুর করতে হবেসালাতে-যিক্রে লেগে থাকতে হবে হাল ছাড়া যাবে না কেবল তবেই আপনি শয়তানের ষড়যন্ত্র বানচাল করতে পারবেন কারণশয়তানের ষড়যন্ত্র তাসের খেলাঘর﴿
মানুষ যখনই আল্লাহর দিকে ফেরেমনে কুমন্ত্রণা হানা দেয় শয়তান ডাকাতের মতো কেউ যখনই আল্লাহর পথে পা বাড়ায়সে পথে বাধাবিপত্তি ফেলে রাখে
আমাদের পূর্বসূরি এক ‘আলিমকে জানানো হয়েছিলইহুদি-খ্রিষ্টানরা বলে, “আমাদের মনে কুমন্ত্রণা আসে না
তিনি বলেছিলেন, “ঠিকই তো বলেছে ওরা ধ্বংসাবশেষ দিয়ে শয়তান কী করবে?” (ফাতাওয়া শাইখুল-ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা২২/৬০৮)
প্রতিকার
মনে কুমন্ত্রণার আনাগোনা টের পেলেই বলুনআমানতু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি (আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করি)
আল্লাহর রাসূল  বলেছেন, “শয়তান তোমাদের কারও কারও কাছে এসে বলে, ‘তোমাকে কে সৃষ্টি করেছে?’
সে বলে, ‘আল্লাহ
এরপর শয়তান বলে, ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?’
তোমাদের কারও বেলায় এমন হলে সে যেন বলেআমানতু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি তা হলে শয়তান তার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে” (আহমাদ২৫৬৭১আলবানির মতে হাদীসটি হাসানদেখুনআস-সাহীহা, ১১৬)
চেষ্টা করুন এটা নিয়ে ভাবা থেকে যতটা পারা যায় দূরে থাকতে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন
সবশেষে আপনার প্রতি পরামর্শসব পরিস্থিতিতে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে রাখুন নিজেকে তাঁর সাহায্য চান তাঁর কাছে কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করুন আমৃত্যু আপনাকে ঈমানের উপর অটল রাখার দুআ করুন ভালো ভালো কাজ করতে করতে যেন মৃত্যু হয় আপনার সেই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করুন
আল্লাহই সবচে ভালো জানেন
উত্তর-প্রদানশাইখ সালিহ মুনাজ্জিদ [তত্ত্বাবধায়ক: islamqa.com]
ভাষান্তর: মাসুদ শরীফ
[সূত্র: https://islamqa.info/en/25778]

No comments:

Post a Comment

আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।