তখন সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের স্কুলে একদিনের জন্য বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মূলত শিশু-কিশোরদের উপযোগী বিভিন্ন বইয়ের সম্ভার ছিল সে-মেলায়। যেদিন মেলা হবে তার একদিন আগেই মাইকে ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ছোটোবেলা থেকেই আমার মধ্যে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। মনে আছে ক্লাস টুতে ভালো ফলাফল করার পুরস্কার হিসেবে রাবেয়া বসরী (র)-এর বই উপহার পেয়েছিলাম। এছাড়াও আরও বিভিন্ন সময়ে উপহার হিসেবে বিভিন্ন বই পেয়েছি। সম্ভবত সবচেয়ে মূল্যবান ছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচি থেকে পাওয়া এক বান্ডিল বই!
গল্পের বই হোক কিংবা পাঠ্যবই ছোটোবেলা থেকেই আমার মধ্যে একটা স্বভাব ছিল: বইয়ের লেখক কে, মুখবন্ধে কী বলা আছে, সূচি ইত্যাদি আগে দেখে নেওয়া। প্রতি বছর নতুন পাঠ্যবই হাতে এলেই—বিশেষ করে বাংলা বই—সবার আগে দেখে নিতাম বইয়ের নাম কী: একেক শ্রেণির বাংলা বইয়ের একেক নাম হতো। এরপর কে বা কারা এর লেখক (পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে যদিও সবসময় লেখা থাকত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড)। এরপরও বইয়ের মলাট উল্টে দেখে নিতাম কারা এর সংকলক। এরপরের পৃষ্ঠায় বইয়ের প্রকাশকাল, প্রকাশনী—অনেকের ভাষায়—ইত্যাদি হাবিজাবি সব তথ্য থাকত। পরের পৃষ্ঠায় থাকত বোর্ডপ্রধানের গৎবাঁধা কিছু কথা। এরপর সূচি। যে-গল্পের শিরোনামটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হতো, সাথে সাথে সেটা পড়ে নিতাম। এভাবেই শুরু হতো পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে পথচলা।
বইমেলায় ফিরে আসি। লম্বা একটি ক্লাসরুমে মাঝখানে টেবিলের পর টেবিল জোড়া লাগিয়ে রকমারি বিভিন্ন বই সাজানো ছিল সেদিন। বেশ কয়েকটি বই পছন্দ হলেও সঙ্গে বেশি টাকা না থাকায় একটি বই-ই কিনতে পেরেছিলাম। বইটির নাম ছিল "সোনার হরিণ"। গল্পটি আজ আর মনে নেই, কিন্তু বই কেনার আগে বই উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখার অভ্যাস আজও অটুট আছে।
গতবছর বই পড়া নিয়ে বই মর্টিমার অ্যাডলার ও চার্লস ভ্যান ডরেনের "হাউ টু রিড অ্যা বুক"-এ দেখলাম আমি বা আমার মতো অনেকেই যারা কমবেশি এই পদ্ধতির অনুসরণ করি, তারা মূলত বই পড়ার একটি বুনিয়াদি পদ্ধতির অনুসরণ করি। যেকোনো বই অনুসন্ধানমূলকভাবে পড়ার জন্য এগুলো প্রাথমিক ধাপ।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে বেশ কিছু বইয়ের বাজার চালু হয়েছে। বই কেনা থেকে শুরু করে বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এদের সেবা বেশ ভালো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বইয়ের দোকান থেকে কোনো বই কেনার আগে যেভাবে আমরা উল্টে-পাল্টে দেখতে পারি, এসব অনলাইন দোকানগুলোর কোনোটাতেই সেই সুবিধা নেই। ফলে বইয়ের নাম কিংবা লেখকের নাম কিংবা অন্যের মুখ থেকে বইয়ের সুনাম শোনার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় বইটি কিনব কি কিনব না। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বইয়ের নাম দেখে একটা বই সম্পর্কে যে-প্রাথমিক ধারণা জন্মে, বইয়ের বিষয়বস্তু মোটেও তা নয়। এসব ক্ষেত্রে বই হাতে পাওয়ার পর হাত চাপড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। বিষয়টা এমন না যে বইটা বাজে। এখানে মূল কথা হচ্ছে বই যাচাই করতে না পারা। বুঝতে না-পারা যে বইটি আসলেই আমার আগ্রহের বিষয়ের সঙ্গে যায় কি না।
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক্ষেত্রে অ্যামাজন ডট কমের নাম উল্লেখ করতে পারি। সম্ভবত বই বিক্রি দিয়েই তাদের অনলাইন বাণিজ্যের শুরু। প্রথমে কেমন ছিল জানি না, কিন্তু অ্যামাজনে বর্তমানে বেশিরভাগ বইয়ের ক্ষেত্রেই 'উল্টে-পাল্টে' দেখার সুযোগ আছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে যেটা মোটেও আশ্চর্যের কিছু নয়। বইয়ের সূচি দেখে আকর্ষণীয় কোনো অংশে সহজেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়। মোদ্দাকথা বইটি আমি আসলেই পড়তে চাই কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অ্যামাজনের প্রযুক্তি প্রায় সরাসরি বইয়ের দোকানে যেয়ে বই দেখার মতোই।
আমার বর্তমান পাঠ্যতালিকায় ফিকশনের চেয়ে নন-ফিকশন বইয়ের সংখ্যা বেশি। আর সেকারণে বই কেনার আগে তা উল্টে-পাল্টে দেখাটা বেশ জরুরি। কিন্তু স্রেফ প্রযুক্তিগত বাধার কারণে অনেক বই-ই ঘরে বসে কিনতে পারি না। আমি জানি না, অ্যামাজনের অনুরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার করা কতটা কঠিন, তবে কাছাকাছি বা বিকল্প কোনো উপায় তো ব্যবহার করা যায়। এই যেমন: বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা স্ক্যান করে রেখে দেওয়া। যাতে পাঠকেরা অন্তত বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে বই সম্পর্কে অন্তত কিছুটা ধারণা পেতে পারেন।
আশা করি অনলাইন বইয়ের বাজার যেভাবে বাড়ছে, তাতে তারা এ বিষয়টায় বিশেষ নজর দেবেন এবং সহজে প্রয়োগযোগ্য কোনো সমাধান নিয়ে আসবেন। এতে শুধু নন-ফিকশনই নয়, ফিকশন বই বিক্রির জোয়াড়েও লাগবে নতুন পাল। সরাসরি বই কিনতে গেলে পাঠক যেভাবে উল্টে-পাল্টে যাচাই করে নিতে পারতেন, অনলাইনে বইয়ের দোকানগুলোতেও সেভাবে যাচাইয়ের সুযোগ পাবেন।
ছোটোবেলা থেকেই আমার মধ্যে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। মনে আছে ক্লাস টুতে ভালো ফলাফল করার পুরস্কার হিসেবে রাবেয়া বসরী (র)-এর বই উপহার পেয়েছিলাম। এছাড়াও আরও বিভিন্ন সময়ে উপহার হিসেবে বিভিন্ন বই পেয়েছি। সম্ভবত সবচেয়ে মূল্যবান ছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচি থেকে পাওয়া এক বান্ডিল বই!
গল্পের বই হোক কিংবা পাঠ্যবই ছোটোবেলা থেকেই আমার মধ্যে একটা স্বভাব ছিল: বইয়ের লেখক কে, মুখবন্ধে কী বলা আছে, সূচি ইত্যাদি আগে দেখে নেওয়া। প্রতি বছর নতুন পাঠ্যবই হাতে এলেই—বিশেষ করে বাংলা বই—সবার আগে দেখে নিতাম বইয়ের নাম কী: একেক শ্রেণির বাংলা বইয়ের একেক নাম হতো। এরপর কে বা কারা এর লেখক (পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে যদিও সবসময় লেখা থাকত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড)। এরপরও বইয়ের মলাট উল্টে দেখে নিতাম কারা এর সংকলক। এরপরের পৃষ্ঠায় বইয়ের প্রকাশকাল, প্রকাশনী—অনেকের ভাষায়—ইত্যাদি হাবিজাবি সব তথ্য থাকত। পরের পৃষ্ঠায় থাকত বোর্ডপ্রধানের গৎবাঁধা কিছু কথা। এরপর সূচি। যে-গল্পের শিরোনামটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হতো, সাথে সাথে সেটা পড়ে নিতাম। এভাবেই শুরু হতো পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে পথচলা।
বইমেলায় ফিরে আসি। লম্বা একটি ক্লাসরুমে মাঝখানে টেবিলের পর টেবিল জোড়া লাগিয়ে রকমারি বিভিন্ন বই সাজানো ছিল সেদিন। বেশ কয়েকটি বই পছন্দ হলেও সঙ্গে বেশি টাকা না থাকায় একটি বই-ই কিনতে পেরেছিলাম। বইটির নাম ছিল "সোনার হরিণ"। গল্পটি আজ আর মনে নেই, কিন্তু বই কেনার আগে বই উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখার অভ্যাস আজও অটুট আছে।
গতবছর বই পড়া নিয়ে বই মর্টিমার অ্যাডলার ও চার্লস ভ্যান ডরেনের "হাউ টু রিড অ্যা বুক"-এ দেখলাম আমি বা আমার মতো অনেকেই যারা কমবেশি এই পদ্ধতির অনুসরণ করি, তারা মূলত বই পড়ার একটি বুনিয়াদি পদ্ধতির অনুসরণ করি। যেকোনো বই অনুসন্ধানমূলকভাবে পড়ার জন্য এগুলো প্রাথমিক ধাপ।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে বেশ কিছু বইয়ের বাজার চালু হয়েছে। বই কেনা থেকে শুরু করে বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এদের সেবা বেশ ভালো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বইয়ের দোকান থেকে কোনো বই কেনার আগে যেভাবে আমরা উল্টে-পাল্টে দেখতে পারি, এসব অনলাইন দোকানগুলোর কোনোটাতেই সেই সুবিধা নেই। ফলে বইয়ের নাম কিংবা লেখকের নাম কিংবা অন্যের মুখ থেকে বইয়ের সুনাম শোনার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় বইটি কিনব কি কিনব না। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বইয়ের নাম দেখে একটা বই সম্পর্কে যে-প্রাথমিক ধারণা জন্মে, বইয়ের বিষয়বস্তু মোটেও তা নয়। এসব ক্ষেত্রে বই হাতে পাওয়ার পর হাত চাপড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। বিষয়টা এমন না যে বইটা বাজে। এখানে মূল কথা হচ্ছে বই যাচাই করতে না পারা। বুঝতে না-পারা যে বইটি আসলেই আমার আগ্রহের বিষয়ের সঙ্গে যায় কি না।
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক্ষেত্রে অ্যামাজন ডট কমের নাম উল্লেখ করতে পারি। সম্ভবত বই বিক্রি দিয়েই তাদের অনলাইন বাণিজ্যের শুরু। প্রথমে কেমন ছিল জানি না, কিন্তু অ্যামাজনে বর্তমানে বেশিরভাগ বইয়ের ক্ষেত্রেই 'উল্টে-পাল্টে' দেখার সুযোগ আছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে যেটা মোটেও আশ্চর্যের কিছু নয়। বইয়ের সূচি দেখে আকর্ষণীয় কোনো অংশে সহজেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়। মোদ্দাকথা বইটি আমি আসলেই পড়তে চাই কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অ্যামাজনের প্রযুক্তি প্রায় সরাসরি বইয়ের দোকানে যেয়ে বই দেখার মতোই।
আমার বর্তমান পাঠ্যতালিকায় ফিকশনের চেয়ে নন-ফিকশন বইয়ের সংখ্যা বেশি। আর সেকারণে বই কেনার আগে তা উল্টে-পাল্টে দেখাটা বেশ জরুরি। কিন্তু স্রেফ প্রযুক্তিগত বাধার কারণে অনেক বই-ই ঘরে বসে কিনতে পারি না। আমি জানি না, অ্যামাজনের অনুরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার করা কতটা কঠিন, তবে কাছাকাছি বা বিকল্প কোনো উপায় তো ব্যবহার করা যায়। এই যেমন: বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা স্ক্যান করে রেখে দেওয়া। যাতে পাঠকেরা অন্তত বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে বই সম্পর্কে অন্তত কিছুটা ধারণা পেতে পারেন।
আশা করি অনলাইন বইয়ের বাজার যেভাবে বাড়ছে, তাতে তারা এ বিষয়টায় বিশেষ নজর দেবেন এবং সহজে প্রয়োগযোগ্য কোনো সমাধান নিয়ে আসবেন। এতে শুধু নন-ফিকশনই নয়, ফিকশন বই বিক্রির জোয়াড়েও লাগবে নতুন পাল। সরাসরি বই কিনতে গেলে পাঠক যেভাবে উল্টে-পাল্টে যাচাই করে নিতে পারতেন, অনলাইনে বইয়ের দোকানগুলোতেও সেভাবে যাচাইয়ের সুযোগ পাবেন।
বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা লিখেছেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান মাসুদ ভাই।
ReplyDeleteতবে একটা কথা না বলে পারছি না। "এক" আর "আকীতাদুত তাওহীদ"-এর মত আকীদার উপর চমৎকার দুটো বই আমাদের উপহার দিয়েছে যে সিয়ান পাবলিকেশন, সেই পাবলিকেশনের সাথে, এমন কী, বই দুটোর সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত একজন মানুষের লেখায় রাবেয়া বসরীর মত একজনের নামের সাথে "রহমাতুল্লাহি আলাইহি" লেখা দেখাটা আমার কাছে যথেষ্ট পরিমাণে অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার। আশা করি এই ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখবেন।
We can say rahmatullahi alaihi/alaiha, rahimahullah etc. for any Muslim. These are words of Dua. They are not reserved for the saints or the scholars exclusively.
Deleteসামি ভাই, রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মানে আল্লাহ তার উপর দয়া করুক। আমার জানামতে যেকোনো মৃত মুসলিমের নামের সঙ্গে এটা দু'আ হিসেবে বলা যায়। যেমন জীবিত কারও ক্ষেত্রে বলা যায় হাফিযাহুল্লাহ (আল্লাহ তাকে রক্ষা করুক)।
Deleteওয়া ইয়্যাকুম।