সূরাহ ইয়া সীন-এ আমরা দেখি যে, একটি নগরীতে
যখন দুজন বার্তাবাহক এসেছিলেন—মানুষকে আল্লাহর
একত্বের দিকে আহ্বান জানাতে—তখন নগরীর লোকজন
তাঁদের অস্বীকার করেন। আল্লাহ তখন তৃতীয় আরেকজন রাসূলকে পাঠিয়ে তাঁদের শক্তিবৃদ্ধি
করেন। কিন্তু এরপরও নগরীর লোকজন তাদের অস্বীকার করেন, এবং আল্লাহর একত্বে অবিশ্বাসী থাকেন।
সেই পরিস্থিতিতে নগরীর প্রান্ত থেকে এক লোক দৌড়ে এসে নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন যে, বার্তাবাহকদের কথা মেনে নিতে। তিনি তাদের সামনে এই যুক্তি তুলে ধরেন যে, "আমি কেন তাঁর উপাসনা করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, এবং যাঁর কাছে আপনাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে।" (৩৬:২২)
আল-কুর'আনের ব্যাখ্যাকারদের মতে, তিনজন রাসূল সহ এই
শুভাকাঙ্ক্ষীকে হত্যা করা হয়। এরপর যখন দৌড়ে-আসা ব্যক্তিটিকে জান্নাতে প্রবেশের
কথা বলা হয়, তখন তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, "হায়! আমার লোকেরা যদি জানত, আমার প্রভু আমাকে
ক্ষমা করে দিয়েছেন, এবং সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।"
(৩৬:২৬-২৭)
হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিটির বক্তব্যটা খেয়াল করুন। মৃত্যুর আগেও তিনি যেমন তাঁর
সম্প্রদায়ের "অবিশ্বাসী" লোকদের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন, নিজের স্বজাতির লোকের হাতে মৃত্যুর পরও তিনি তাঁর লোকদের দুরাবস্থার কথা
চিন্তা করে আফসোস করেছিলেন।
যেসব-ব্যক্তি সত্যের সন্ধান পান তারা এমনই। সর্বাবস্থায় তাঁরা অপরের কল্যাণ
কামনা করেন।
সূরাহ ইয়া সীন-এর পরবর্তী আয়াতগুলো থেকে জানা যায় যে, সেই সম্প্রদায়টিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এবং আল্লাহ নিজেও তাঁর
সৃষ্টির ব্যাপারে আক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেছেন, "বড় আফসোস (আমার) বান্দাদের জন্য! তাদের কাছে যে রাসূলই আসত, তার সাথেই তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত।" (৩৬:৩০)
মৃত ব্যক্তি ইতোমধ্যেই তার কাজের ফলাফল ভোগ করছেন। কাজেই তার মৃত্যুতে আস্ফালন
বা উল্লাসের কিছু নেই। আমরা নিজেরাও জানি না, শেষ পর্যন্ত
আল্লাহর দয়ায় আমরা জান্নাতে যেতে পারব কি না।
সুতরাং, আমরা নিজেদের নিয়েই চিন্তিত হই, ভালো কাজ করি, মন্দ কাজের নিষেধ করি; এবং নিরন্তর সাধনা করি নিজের কাজ ও চরিত্রের উৎকর্ষে।
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।