“পাপ তো ঘোচাতেই হবে: হয় এই দুনিয়ায় অনুতাপের
আগুনে পুড়িয়ে, নয়তো পরকালে জাহান্নামের আগুনে জ্বলিয়ে।” —ইব্ন আল-কায়্যিম
প্রতিদিনকার জীবনে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা
মুসলিম তরুণদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে চলতে হয়। আমাদের বিশ্বাসের
সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন বহু সামাজিক, পারিবারিক কিংবা সাংস্কৃতিক প্রচারণা, আদর্শের
সাথে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হয় অবিরত। অহংকার, লালসা, লোভ, বিয়েবহির্ভূত
সম্পর্ক, মদ/নেশা, নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ইত্যাদিতে ছেয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
এগুলো ছাড়াও আরও নানান ধরনের অনৈসলামিক সামাজিক প্রথা ও
সংস্কারের মাঝে ডুবে আছি আমরা। বর্ণবাদ, জোরপূর্বক বিয়ে, নারীদের শিক্ষা থেকে
বঞ্চিত করা, বংশপ্রীতি—এ ধরনের অনেক কিছুই চলছে বিভিন্ন মুসলিম সমাজে।
কি স্বদেশে কি বিদেশে, আজ আমরা আমাদের মুসলিম পরিচয়টা ধরে
রাখতেই যেন হিমশিম খাচ্ছি। মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকতেই যেন প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছে।
যেদিকেই তাকাই সেদিকেই যেন শুধু পাপের প্রলোভন। সে প্রলোভন থেকে গা-বাঁচানো বড়
কষ্টের।
একবার পড়ে উঠে যাওয়ার আগেই আবার পড়ে যাই। প্ররোচনা,
অন্যান্য মুসলিমদের পক্ষপাতদুষ্টতা ও বৈষম্য, আমাদের নিজেদের পরিবার, স্কুল কিংবা
কলেজ জীবন সবকিছুই আমাদের ইসলাম টিকিয়ে রাখার চেষ্টাকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে
ফেলেছে।
ধীরে ধীরে এভাবে একসময় আমাদের হৃদয় ক্ষয়ে যায়, অদ্ভুত এক
দুঃশ্চিন্তা আমাদের আত্মাকেও নষ্ট করে ফেলে। নৈতিক মূল্যবোধের বাণী তখন মাথায় মৃদু
স্বরে বাজে। সেই স্বর আমাদের বারবার সাবধান করে দেয়, আমরা যা করছি তা হারাম:
অপরাধের কাজ। কিন্তু আমরা সে-স্বরে পাত্তা দিই না। আমরা তখন সেই স্বরের গলা চেপে
ধরে তাকে চুপ করিয়ে দিই।
পাপের প্রলোভন যখন সবখানে ছড়ানো, তখন সেখান থেকে আমরা মুখ
ফেরাব কী করে? উল্টো সমাজে তো এসব কাজেরই প্রশংসা করা হয়, সম্মান করা হয়, যারা
এগুলো করে তাদেরকেই মর্যাদা দেওয়া হয়! আমরা দোটানায় পড়ে যাই, যখন দেখি খারাপ
কাজকেই ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তখন আমরা আমাদের প্রাকৃতিক স্বভাবের বিরুদ্ধে
খারাপ কাজেই গা ভাসিয়ে দিই। আমরা তলিয়ে যাই আমাদেরই নিজ নরকে, যেখানে আমাদের
অন্তরের কষ্ট, দুঃখ, হতাশা আর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর ইব্ন
আল-কায়্যিম একেই বলেছেন “অন্তরের অনুতাপের আগুন”।
ইব্ন আল-কায়্যিমের এই কথা থেকে আমি এটাই শিখি যে,
প্রায়শ্চিত্ত করে পরিশুদ্ধ তো আমাদের হতেই হবে। সেই পরিশুদ্ধতা কোথায় অর্জন করব
সেটা হচ্ছে কথা। তাওবার মাধ্যমে সেই প্রায়শ্চিত্ত কি এই জীবনে করব নাকি আগুনে
জ্বলে পরিশুদ্ধ হতে পরকালের জন্য অপেক্ষা করব সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা
এখন আমাদের।
আমি জানি, এ জীবনে আমরা বহু অপরাধ করেছি। অপরাধের
কালিমায় হয়েছি ক্ষত-বিক্ষত যন্ত্রণাকাতর। আমরা আমাদের সেসব কাজ নিয়ে লজ্জিত। হয়তো
তাওবা করার জন্য নিজেকে অযোগ্য মনে করছি। কিন্তু অন্তরের সেই আগুন যে নেভাতেই
হবে—যে করেই হোক। দিনশেষে যাঁর ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতাই আমাদের একমাত্র কাম্য,
তাঁর সেই ভালোবাসা, তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার তৃষ্ণা মেটাতেই হবে।
কাজেই এক্ষুনি বলুন: আসতাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাইছি)।
পাপ করেছি বলেই জীবনের সব শেষ হয়ে যায়নি। শয়তানের ধোঁকায়
পড়বেন না। যেসব মানুষেরা আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে কিংবা যারা
খোলামেলাভাবে এবং গর্বভরে অপরাধ করে তাদের দেখেও ধোঁকা খাবেন না।
বারে বারে আমরা পড়ে যেতে পারি, কিন্তু মনে রাখবেন যতক্ষণ
দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ আশাও আছে।
সুমহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
মূল লেখক: উবাহ
মূল লেখার লিংক: http://www.virtualmosque.com/personaldvlpt/reflections/our-personal-hells/
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।