অবশেষে আজকে দুটো সিম বায়োমেট্রিকস পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে এলাম। কেউ কেউ দাবি করছেন এতে ব্যক্তিগত তথ্যের
অপব্যবহার হতে পারে। সরকারপক্ষের
দাবি এতে জননিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। অবৈধ কাজে
সিম ব্যবহার করলে অবৈধ ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা সহজ হবে।
নিবন্ধন করতে যেয়ে বায়োমেট্রিকস পদ্ধতি নিয়ে জানার একটু আগ্রহ
জাগল। নেট ঘেঁটে বুঝতে পারলাম, এটা হচ্ছে মানুষের দেহের বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যেমন: ডিএনএ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের রেটিনা
ও আইরিস, কণ্ঠস্বর, চেহারা ও হাতের মাপ
এগুলো মেপে ও বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিগত তথ্য জমা করা ও শনাক্ত করার পদ্ধতি।[i] তবে অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর তুলনায় কোনো
ব্যক্তি বা অপরাধী শনাক্তকরণে ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ বেশি ব্যবহৃত হয়।
১৮২৩ সালে চেক অ্যানাটমিস্ট পারকিনিয়ে (Purkinje) আবিষ্কার করেন যে, মানুষের আঙুলের ডগায় যে-বিচিত্র রেখাগুলো আছে সেগুলো মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। ১৮৯২ সালে ড. ফ্রান্সিস গ্যালটন প্রমাণ করেন যে, মানুষের আঙুলের ছাপ
আজীবন এক থাকে। সন্তান ভূমিষ্ঠ
হওয়ার আগে গর্ভাবস্থায় ১০০-১২০ দিনের মধ্যেই আঙুলের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।[ii]
এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯৩ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কমিশনার এডওয়ার্ড
হেনরি আঙুলের ছাপ সংগ্রহের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। আর ব্রিটিশ এনসাইক্লোডিয়ার তথ্য অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে স্কটল্যান্ড
ইয়ার্ডের পুলিশ বিভাগে শক্ত প্রমাণ হিসেবে আঙুলের ছাপকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[iii]
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আঙুলের ছাপ সংক্রান্ত আবিষ্কারগুলো
গত দু শ বছরের ভেতরে হলেও আল-কুর’আনে এর
উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় ১৪ শ বছর আগে।
সূরাহ আল-কিয়ামাহ্র ৩ ও ৪
নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “মানুষ কি মনে করে আমি তার হাড়গুলো জড়ো
করতে পারব না? বরং আমি তো নিখুঁতভাবে তার আঙুলের ডগা পর্যন্ত
জড়ো করতে সক্ষম।”
পরকাল নিয়ে সেই সময়ের মাক্কার কাফিরদের যেমন দ্বিধা ছিল, তেমনি দ্বিধা আছে বর্তমান প্রজন্মের অনেকের। বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে, কিন্তু কিছু মানুষের চিন্তাচেতনা
যেন এখনো আটকে আছে সপ্তম শতকের কাফিরদের চিন্তার গণ্ডিতে। তখন না-হয় বিজ্ঞান এত উন্নত
ছিল না। গবেষণার
দুয়ার এত চওড়া ছিল না। দুজন মানুষের
আঙুলের ছাপ যে আলাদা সেটা না-হয় তাদের জন্য বোঝা দুষ্কর ছিল। কিন্তু মানুষ যখন এগুলো জানে যে, দুটো জমজ মানুষের আঙুলের ছাপও ভিন্ন হয় এবং যখন তারা আল-কুর’আনের এই আয়াত দেখে, তখন তারা
কীভাবে পরকালকে অস্বীকার করতে পারে?
মাত্র কয়েক বর্গসেন্টিমিটারের মতো ছোট্ট জায়গায় বিচিত্র সব
সূক্ষ্ম ও স্বতন্ত্র রেখার গঠন স্রষ্টার চমৎকারিত্বকেই ইঙ্গিত করে। মানুষ যখন স্রষ্টাকে অস্বীকার করা কিংবা পরকালের
ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য বলে যে, আমরা মরে-গলে-পঁচে যাওয়ার পর কীভাবে আবার আমাদেরকে পুনরায় ওঠানো
হবে? তখন আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করলেন, শুধু হাড়গোড়ই না, তার আঙুলের ডগার স্বতন্ত্র রেখাগুলোসহ
তাকে পুনরায় ওঠানোর সামর্থ তাঁর আছে।
এভাবে আল্লাহ শুধু মানুষের নিজের মধ্যেই অগণিত নিদর্শন ছড়িয়ে
রেখেছেন। শুধু প্রয়োজন
একটু মুক্তমনে সেগুলোর অবলোকন।
“এই কুর’আন যে সত্য, তা যাতে তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, সেজন্য (পৃথিবীর) দিক-দিগন্তে ও তাদের নিজেদের
মধ্যে আমি আমার নিদর্শনগুলো দেখাব।” [সূরাহ ফুসসিলাত, ৪১:৫৩]
বায়োমেট্রিকস পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের মাধ্যমে সরকারের খাতায়
যেভাবে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে কারও নাম ভুক্ত হয়ে গেছে, তার আগেই, মানুষের আত্মা সৃষ্টির সময়েই আল্লাহর সংরক্ষিত
ফলকে তার নাম ভুক্ত হয়ে আছে। আগে যা-ই
করুক, সিম নিবন্ধনের পর এখন এই সিমের অপব্যবহার নিয়ে দুবার হলেও
মানুষ চিন্তা করবে। ধরা পড়ার
একটা জুজু কাজ করবে।
ডিজিটাল সিস্টেম—ডিজিটালভাবে হয়তো ফাঁকিও দেওয়া
যাবে। কিংবা সুনজর
থাকলে অনেক কিছু করে পারও পাওয়া যাবে। আবার কুনজর
থাকলে কিছু না-করেও ধরা খেতে হতে পারে। তবে মহান আল্লাহ সুবিচারক। কারও প্রতি অণু পরিমাণও অবিচার তিনি করবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে যেই সিম (পড়ুন আত্মা) দিয়েছেন, আমরা তার
প্রতি সুবিচার করছি তো?
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।