কুরআনের একটা ভালো লাগার জিনিস কি—এখানে আল্লাহ শুধু সমস্যাগুলো তুলে ধরেন না; সমাধানও বলে দেন। আজকাল যেমন ‘হাউ টু ডু অমুক’ বা ‘তমুক করবেন কীভাবে’—এ ধরনের যেসব বই পাওয়া যায় ঠিক তেমন। মার্টিমার অ্যাডলার ও চার্লস ভ্যান ডরেন তাদের ‘হাউ টু রিড আ বুক’-এ দু ধরনের বইয়ের কথা বলেছিলেন: তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক। আমার মতে কুরআন একদিকে যেমন তাত্ত্বিক, তেমনি ব্যবহারিক। এবং ব্যবহারিক বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সেরা।
৪ নং আয়াতটিতে আল্লাহ বলছেন, إِنَّ ٱلَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَآءِ ٱلْحُجُرَٰتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ। আয়াতটিকে ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়: ﴾প্রাচীরের আড়াল থেকে যারা তারস্বরে চিৎকার করে ডাকে, তাদের বেশিরভাগই অবুঝ।﴿
এক বেদুইন এসে নবিজিকে মাসজিদে না পেয়ে তারস্বরে চিৎকার করে ডাকতে লাগল, “মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদ। আল্লাহর রাসূল।”
নবিজি ﷺ সে লোকের কথার কোনো জবাব দেননি তখন। শিষ্টাচার বহির্ভূত এমন আচরণের প্রসঙ্গে আল্লাহ উপরের আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।
সুমহান আল্লাহ শুধু সমস্যাটার দিকে ইঙ্গিত করেই থেমে যাননি। তিনি এর সুন্দর একটি সমাধান দিয়েছেন পরের আয়াতে, وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا۟ حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ । মানে ﴾তুমি বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা যদি সবুর করত, তা হলে সেটাই ভালো হতো তাদের জন্য। আল্লাহ বারবার ক্ষমা করেন। তিনি দয়াময়।﴿
সহজ ও সুন্দর সমাধান।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে আয়াতের শেষে আল্লাহ তাঁর ক্ষমা ও দয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন আমাদের। কেন বলুন তো?
এই যে কিছুক্ষণ আগে তারা নবিজিকে এভাবে জোরে জোরে ডেকে এত বড় একটা বেয়াদবি করে ফেলল, এখন কী হবে তাদের? দয়াময় প্রভু তাদেরকে করুণার পরশ বুলিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অন্যায় যত বড় হোক, আন্তরিকভাবে অনুশোচনা করলে তিনি মাফ করে দেন।
তাফসীর নোটস
— একে অপরকে আমরা যেভাবে ডাকাডাকি করি গুরুজন, সম্মানিতজনদের সেভাবে ডাকা যাবে না
— ভুল হয়ে গেলে মাফ চেয়ে নেব
তাফসীর সূত্র
ইসমাঈল ইবনে কাছীর, তাফসীর ইবনে কাছীর। অনুবাদ: আখতার ফারূক। খণ্ড ১০। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৪।
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।