চট্টগ্রাম এলেই আমার একটা বাতিক হচ্ছে বইঘর (লাইব্রেরি) ঘুরে দেখা। কোনো বই কেনার তাগিদ থাকুক কি না থাকুক, আমি লাইব্রেরি ঘুরি—বই দেখি, উল্টে পাল্টে দেখি। নতুন কী বই এল, বইয়ের আকার আকৃতির কেমন রূপ বদলাল এগুলো খেয়াল করি। মোট পৃষ্ঠার তুলনায় দামটা কেমন সেটা মেপে দেখি। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাই বইয়ের বাহ্যিক ব্যাপারটাও মাথায় ঢুকে গেছে।
বইয়ের সঙ্গে যাদের ন্যূনতম সম্পর্ক আছে তারা সম্ভবত “বাতিঘর” লাইব্রেরির নাম শুনে থাকবেন। একটি সম্পূর্ণ লাইব্রেরি বলতে যা বোঝায় এটা অনেকটা তা-ই। ভাষা, সাহিত্য থেকে শুরু করে প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস কিংবা গবেষণাধর্মী সব ধরনের বইয়েরই খনি এই লাইব্রেরি। শত শত বইয়ের ভিড়ে মনটা একটু থিতিয়ে গেলে কফি পান করে চাঙা হওয়ার সুযোগ আছে এখানে। কাজেই বইপ্রেমীদের জন্য আদর্শ এক স্থান এটা।
তবে এবার চাটগাঁয় যেয়ে অন্য একটা বইঘর দেখার ইচ্ছে ছিল। কয়েকদিন আগে পত্রিকা মারফৎ জানতে পারি এই বইঘরের খবর। চাটগাঁর বইপ্রেমীরা হয়তো আরও আগেই জেনে থাকবেন তা: “অমর বই ঘর”। আগে ছিল শুধু স্টেশন রোডে। সম্প্রতি নতুন শাখা খুলেছে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা জিইসি মোড়ে। খুব সম্ভবত পুরনো বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এর যাত্রা শুরু। সময়ের আবর্তনে এখন নতুন নতুন বইও জায়গা করে নিয়েছে এখানে।
আমার এবারের গন্তব্যস্থল ছিল জিইসি মোড়ের শাখাটিতে। নগরীর পেনিনসুলা হোটেলের পাশেই তৃতীয় তলায় বৃহৎ পরিসর নিয়ে সাজানো হয়েছে অমর বই ঘরের এই শাখাটি। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই নতুন পলিশ করা কাঠের সুবাস জানান দিচ্ছিল সদ্য উন্মোচিত বইঘরটির। বাতিঘরের সঙ্গে অমর বইঘরের অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে এখানে কলেজ-ভার্সিটির নতুন-পুরোনো বইয়েরও সংগ্রহ আছে। ফলে একই সঙ্গে এখানে যেন নীলক্ষেত আর আজিজ সুপার মার্কেটের মিশ্রণ খুঁজে পাওয়া যায়।
লাইব্রেরিতে ঢুকেই যা করি: একপাশ থেকে একের পর এক বই দেখতে শুরু করি। কোনো বই চোখে লাগলে তাক থেকে নামিয়ে উল্টে পাল্টে দেখি। খুব বেশি আকর্ষী না-হলে রেখে দিই। চলে যাই পরের তাকে। এ ধরনের লাইব্রেরিগুলোতে এলে মনের মধ্যে একটা খটমট দানা বাঁধতে থাকে। যতই দেখি ততই তা আরও বাড়তে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছিল না। হঠাৎ চোখ বড় হয়ে ওঠে যখন এক তাকে দেখি “সিয়ান পাবলিকেশন”-এর বই! ভুল দেখিনি। “সিয়ান”-এরই বই: যাদের লক্ষ্য জ্ঞানের আলোকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক মুসলিম জাতি তৈরি করা। আর সেটা অসম্ভব যদি “সিয়ান”-এর বইগুলো ইসলামিক তকমার আলোকে কেবল ইসলামি পরিমণ্ডলে ঘুরপাক খায়। এজন্য জরুরি ছিল এ ধরনের বারোয়ারি লাইব্রেরিতে—যেখানে সব ধরনের পাঠকেরা আসেন সেখানে—“সিয়ান”-এর বইগুলো যেন জায়গা করে নেয়।
কেবল গৎবাঁধা রীতিসর্বস্ব চিরাচরিত ইসলামি বই নিয়ে ময়দানে নামেনি “সিয়ান”। প্রথম প্রকাশিত বই “ম্যারিজ: মেকিং অ্যান্ড লিভিং ইট”-এর মধ্যেই ছিল সেই স্বপ্ন পূরণের ইন্ধন। “স্বামী-স্ত্রীর মধুর মিলন” টাইপ কোনো বই ছিল না এটি। বাস্তব পৃথিবীর আলোকে, সমকালীন প্রেক্ষাপটে কীভাবে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা হবে, বিয়ের আগে কী কী প্রস্তুতি থাকতে হবে, একক পরিবার, যৌথ পরিবার; বিয়ের পর সম্ভাব্য বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পরামর্শ—এরকমই বৈচিত্রময় বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম বইটি। আর সেখানে সব দিকনির্দেশনা ছিল ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে—যেটা আমার মতে বাংলা বই বাজারে প্রথম।
এরপর একে একে “সিয়ান”-এর হাত ধরে আসে, “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে”, “মাযহাব: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত”, “এক”, “লিডারশিপ লেসন্স ফ্রম দ্যা লাইফ অফ রাসূলুল্লাহ (সা.)”, “রেইজিং অ্যা মুসলিম চাইল্ড”, “সভ্যতার সংকট”, “স্রষ্টা ধর্ম জীবন”-এর মতো বৈচিত্রময় সব বই।
সম্প্রতি “সিয়ান” থেকে বের হয় “চয়ন” বইটি। এটি মূলত অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামপন্থীদের বিভিন্ন লেখার সংকলন। এসব ইসলামপন্থীরা বয়সে তরুণ। পড়াশোনা করেছেন জেনারেল লাইনে। জীবনের কোনো একসময় হয়তো কথিত বিজ্ঞানমনস্কতার ঝাপটায় নাটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তারা আবার ফিরে এসেছেন ইসলামের কোটরে। শুধু এসেই ক্ষান্ত হননি; ব্রতী হয়েছেন ইসলামের সত্য বাণী প্রচারে। আর তা গতানুগতিক উপায়ে নয়। যুক্তি ও বিজ্ঞানের নাম ভাঙিয়ে ইসলামের টুঁটি যারা চেপে ধরতে চেয়েছিলেন, তাদের দেওয়া অস্ত্র—যুক্তি ও বিজ্ঞান—ব্যবহার করেই খণ্ডন করা হয়েছে তাদের দাবি। মানুষের মুক্তচিন্তাকে ব্যবহার করে দেওয়া হয়েছে মনে-সংশয়-জাগানিয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
নজরকাড়া প্রচ্ছদ, আকর্ষণীয় পেজমেকিং, পৃষ্ঠার মান, সম্পাদনা সবদিক দিয়েই “সিয়ান” বাংলাদেশের ইসলামি প্রকাশনী জগতে অনন্য এক নাম। ব্যক্তিগতভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলে মনে স্বপ্ন ছিল একদিন বারোয়ারি সব লাইব্রেরিতে জায়গা করে নেবে “সিয়ান”-এর সব বই। যেসব লাইব্রেরিতে একচেটিয়াভাবে রাজত্ব করছিল যুক্তি আর বিজ্ঞান, অবগুণ্ঠন পরাচ্ছিল সত্যের মাথায়, সেখানে পাল্টা যুক্তি আর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়ে চেপে রাখা সত্যকে উন্মোচন করছে “সিয়ান”।
যাত্রা সবে শুরু। কলমযুদ্ধে তাদেরকে পাড়ি দিতে হবে অনেক লম্বা পথ। বারোয়ারি লাইব্রেরিতে “সিয়ান”-এর বই প্রাথমিক পদক্ষেপ। “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে”, “স্রষ্টা ধর্ম জীবন, “চয়ন”-এর মতো বইগুলো মুক্তচিন্তায় নতুন সংযোজন। চিন্তার এই পালাবদলের সূচনালগ্নে সবাইকে স্বাগতম।
বইয়ের সঙ্গে যাদের ন্যূনতম সম্পর্ক আছে তারা সম্ভবত “বাতিঘর” লাইব্রেরির নাম শুনে থাকবেন। একটি সম্পূর্ণ লাইব্রেরি বলতে যা বোঝায় এটা অনেকটা তা-ই। ভাষা, সাহিত্য থেকে শুরু করে প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস কিংবা গবেষণাধর্মী সব ধরনের বইয়েরই খনি এই লাইব্রেরি। শত শত বইয়ের ভিড়ে মনটা একটু থিতিয়ে গেলে কফি পান করে চাঙা হওয়ার সুযোগ আছে এখানে। কাজেই বইপ্রেমীদের জন্য আদর্শ এক স্থান এটা।
তবে এবার চাটগাঁয় যেয়ে অন্য একটা বইঘর দেখার ইচ্ছে ছিল। কয়েকদিন আগে পত্রিকা মারফৎ জানতে পারি এই বইঘরের খবর। চাটগাঁর বইপ্রেমীরা হয়তো আরও আগেই জেনে থাকবেন তা: “অমর বই ঘর”। আগে ছিল শুধু স্টেশন রোডে। সম্প্রতি নতুন শাখা খুলেছে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা জিইসি মোড়ে। খুব সম্ভবত পুরনো বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এর যাত্রা শুরু। সময়ের আবর্তনে এখন নতুন নতুন বইও জায়গা করে নিয়েছে এখানে।
আমার এবারের গন্তব্যস্থল ছিল জিইসি মোড়ের শাখাটিতে। নগরীর পেনিনসুলা হোটেলের পাশেই তৃতীয় তলায় বৃহৎ পরিসর নিয়ে সাজানো হয়েছে অমর বই ঘরের এই শাখাটি। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই নতুন পলিশ করা কাঠের সুবাস জানান দিচ্ছিল সদ্য উন্মোচিত বইঘরটির। বাতিঘরের সঙ্গে অমর বইঘরের অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে এখানে কলেজ-ভার্সিটির নতুন-পুরোনো বইয়েরও সংগ্রহ আছে। ফলে একই সঙ্গে এখানে যেন নীলক্ষেত আর আজিজ সুপার মার্কেটের মিশ্রণ খুঁজে পাওয়া যায়।
লাইব্রেরিতে ঢুকেই যা করি: একপাশ থেকে একের পর এক বই দেখতে শুরু করি। কোনো বই চোখে লাগলে তাক থেকে নামিয়ে উল্টে পাল্টে দেখি। খুব বেশি আকর্ষী না-হলে রেখে দিই। চলে যাই পরের তাকে। এ ধরনের লাইব্রেরিগুলোতে এলে মনের মধ্যে একটা খটমট দানা বাঁধতে থাকে। যতই দেখি ততই তা আরও বাড়তে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছিল না। হঠাৎ চোখ বড় হয়ে ওঠে যখন এক তাকে দেখি “সিয়ান পাবলিকেশন”-এর বই! ভুল দেখিনি। “সিয়ান”-এরই বই: যাদের লক্ষ্য জ্ঞানের আলোকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক মুসলিম জাতি তৈরি করা। আর সেটা অসম্ভব যদি “সিয়ান”-এর বইগুলো ইসলামিক তকমার আলোকে কেবল ইসলামি পরিমণ্ডলে ঘুরপাক খায়। এজন্য জরুরি ছিল এ ধরনের বারোয়ারি লাইব্রেরিতে—যেখানে সব ধরনের পাঠকেরা আসেন সেখানে—“সিয়ান”-এর বইগুলো যেন জায়গা করে নেয়।
কেবল গৎবাঁধা রীতিসর্বস্ব চিরাচরিত ইসলামি বই নিয়ে ময়দানে নামেনি “সিয়ান”। প্রথম প্রকাশিত বই “ম্যারিজ: মেকিং অ্যান্ড লিভিং ইট”-এর মধ্যেই ছিল সেই স্বপ্ন পূরণের ইন্ধন। “স্বামী-স্ত্রীর মধুর মিলন” টাইপ কোনো বই ছিল না এটি। বাস্তব পৃথিবীর আলোকে, সমকালীন প্রেক্ষাপটে কীভাবে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা হবে, বিয়ের আগে কী কী প্রস্তুতি থাকতে হবে, একক পরিবার, যৌথ পরিবার; বিয়ের পর সম্ভাব্য বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পরামর্শ—এরকমই বৈচিত্রময় বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম বইটি। আর সেখানে সব দিকনির্দেশনা ছিল ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে—যেটা আমার মতে বাংলা বই বাজারে প্রথম।
এরপর একে একে “সিয়ান”-এর হাত ধরে আসে, “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে”, “মাযহাব: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত”, “এক”, “লিডারশিপ লেসন্স ফ্রম দ্যা লাইফ অফ রাসূলুল্লাহ (সা.)”, “রেইজিং অ্যা মুসলিম চাইল্ড”, “সভ্যতার সংকট”, “স্রষ্টা ধর্ম জীবন”-এর মতো বৈচিত্রময় সব বই।
সম্প্রতি “সিয়ান” থেকে বের হয় “চয়ন” বইটি। এটি মূলত অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামপন্থীদের বিভিন্ন লেখার সংকলন। এসব ইসলামপন্থীরা বয়সে তরুণ। পড়াশোনা করেছেন জেনারেল লাইনে। জীবনের কোনো একসময় হয়তো কথিত বিজ্ঞানমনস্কতার ঝাপটায় নাটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তারা আবার ফিরে এসেছেন ইসলামের কোটরে। শুধু এসেই ক্ষান্ত হননি; ব্রতী হয়েছেন ইসলামের সত্য বাণী প্রচারে। আর তা গতানুগতিক উপায়ে নয়। যুক্তি ও বিজ্ঞানের নাম ভাঙিয়ে ইসলামের টুঁটি যারা চেপে ধরতে চেয়েছিলেন, তাদের দেওয়া অস্ত্র—যুক্তি ও বিজ্ঞান—ব্যবহার করেই খণ্ডন করা হয়েছে তাদের দাবি। মানুষের মুক্তচিন্তাকে ব্যবহার করে দেওয়া হয়েছে মনে-সংশয়-জাগানিয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
নজরকাড়া প্রচ্ছদ, আকর্ষণীয় পেজমেকিং, পৃষ্ঠার মান, সম্পাদনা সবদিক দিয়েই “সিয়ান” বাংলাদেশের ইসলামি প্রকাশনী জগতে অনন্য এক নাম। ব্যক্তিগতভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বলে মনে স্বপ্ন ছিল একদিন বারোয়ারি সব লাইব্রেরিতে জায়গা করে নেবে “সিয়ান”-এর সব বই। যেসব লাইব্রেরিতে একচেটিয়াভাবে রাজত্ব করছিল যুক্তি আর বিজ্ঞান, অবগুণ্ঠন পরাচ্ছিল সত্যের মাথায়, সেখানে পাল্টা যুক্তি আর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়ে চেপে রাখা সত্যকে উন্মোচন করছে “সিয়ান”।
যাত্রা সবে শুরু। কলমযুদ্ধে তাদেরকে পাড়ি দিতে হবে অনেক লম্বা পথ। বারোয়ারি লাইব্রেরিতে “সিয়ান”-এর বই প্রাথমিক পদক্ষেপ। “তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে”, “স্রষ্টা ধর্ম জীবন, “চয়ন”-এর মতো বইগুলো মুক্তচিন্তায় নতুন সংযোজন। চিন্তার এই পালাবদলের সূচনালগ্নে সবাইকে স্বাগতম।
No comments:
Post a Comment
আপনার সুচিন্তিত ও গঠনমূলক মতামতের জন্য ধন্যবাদ।